বিক্রী করতেন বাদাম। আর এই বাদাম বিক্রীর জন্যই মুখে মুখে গান বেঁধেছিলেন, যে গান এখন রীতিমতো ভাইরাল। ইউটিউবে কাঁচাবাদাম লিখলেই ফুটে উঠছে বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকরের স্বরচিত , স্বকন্ঠে গাওয়া সেই গানের ভিডিও। কিন্তু হঠাৎ সেই বাদাম বিক্রেতা পুলিশের দ্বারস্থ হলেন কেন? সেটাই প্রশ্ন। আর প্রশ্ন উঠেছে গানের কপিরাইট নিয়ে। যে গান রাতারাতি এত বিখ্যাত সেই গানের সত্বাধীকারী হিসেবে কিছু তো প্রাপ্য হয় তাঁর? এই প্রশ্নই তুলেছেন বীরভূম জেলার দুবরাজপুরের এই বাদাম বিক্রেতা।
“আমার কাছে নাই তো বুবু ভাজা বাদাম/ আমার কাছে পাবে শুধু কাঁচা বাদাম “
বিখ্যাত এই গানের স্রষ্টা যিনি, তিনি বাদাম ফেরি করেন। দুবরাজপুরের লক্ষীনারায়ণপুরের কুড়ালজুড়ি গ্রামের অধিবাসী ভুবন বাদ্যকর। নিজের একটি পুরোনো মোটর সাইকেলে চেপে তিনি নিজের এলাকায় বাদাম বিক্রী করেন , কখনও আবার পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ডেও চলে যান তিনি। আর পাঁচটা হকারের মতো লোকের মন টানতেই গেয়ে শোনান নিজের তৈরি গান। আর সে গানের টানেই মানুষ ছুটে আসেন এই বাদাম বিক্রেতার কাছে।
হাতের চুড়ি, ইমিটেশন গয়না, ভাঙা মোবাইল, মাথার চুল, হাঁসের পালক এসব সরঞ্জামের বিনিময়েই ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন কাঁচা বাদাম। আর এসব সরঞ্জাম নিয়েই বীরভূমের সাধারণ মানুষটি বেঁধে ফেলেছেন এমনই এক গান, যা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে নিজের গানের এই প্রবল জনপ্রিয়তার কথা জানতেন না ভুবন বাদ্যকর। গ্রামেরই কিছু মানুষজন তাঁকে বোঝায় এই সৃষ্টির বিনিময়ে প্রাপ্যের কথা। নিজের গানের কপিরাইটের কথা জানতে পারেন তিনি। আর সেই বিচার চাইতেই থানার দ্বারস্থ হন। আপাত সরল এই মানুষটি এমন বিশ্বাস তো পোষণ করেন যে, বিচার চাইতে গেলে পুলিশের কাছেই যেতে হয়। আশ্চর্য হল, থানায় ঢোকবার সময়েও মাথা থেকে হেলমেট খোলেননি ভয়ে , কেউ যদি তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়!
অপহরণ তো দূরের কথা! উল্টে থানা পুলিশ সমেত সাধারণ পাবলিক তাঁকে ঘিরে ভিড় জমিয়ে তুলল ! আরো একবার স্বকন্ঠে গাইতে হল সেই ভাইরাল হওয়া বিখ্যাত গান ‘কাঁচাবাদাম’। তবে নিজের এই জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পুরোপুরি খুশিও হতে পারছেননা বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর। তাঁর ছেলে জানিয়েছে, “বাবার এই গান ছড়িয়ে পড়ার পর নানা জায়গা থেকে লোকজন শুধুই গান শুনতে আসছেন। বাদামও কিনছেননা, গান শুনেই চলে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরেই এমন হয়ে চলেছে। বাদাম বিক্রী না হওয়ায় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খুব সমস্যায় আছি।”
দুবরাজপুর থানা তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ কিছু মানুষ ভুবন বাদ্যকরের কথা আলোচনা করছেন। কোথায় গেলে পাবেন এই গানের স্রষ্টা তাঁর গানের স্বীকৃতি? কীভাবে দিন চলবে তাঁর! আপাতত সেই প্রশ্নই সকলের সামনে মেলে ধরেছেন ভুবন বাদ্যকর।