সম্প্রদায় নাকি সম্প্রীতি কোনটা চান মানুষ ! সঠিক উত্তর দিতে হয়তো অনেকেই ভাবনাচিন্তা করবেন। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-পাল্টা যুক্তিও তুলতে পারেন কেউ কেউ। তবে এবারের দুর্গাপূজোয় ধর্মীয় বিশ্বাসকে অন্তরে রেখেই সমস্ত যুক্তি তর্কের বাইরে দাঁড়িয়ে আন্তরিক মেলবন্ধনের দৃষ্টান্ত তৈরি করল পূর্ব মেদিনীপুরের একটি গ্রাম।দেখা গেল মা বর্গেশ্বরীর মন্দিরে অনেকের সাথে মিলে কিছু ফেজ টুপি পরা মুসলিম যুবকও ফুল হাতে অঞ্জলি দিচ্ছেন।
অবাক হচ্ছেন! না এ ঘটনা নিছকই কারুর ইচ্ছা প্রসূত নয়। কথা বলছে ইতিহাস। দেবী দুর্গা এখানে মা বর্গেশ্বরী রূপে পূজিতা হন। ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে দুর্ধর্ষ মারাঠা বর্গীরা কংসাবতী নদী পার হবার উদ্দেশ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের বরগোদা গ্রামে তাদের অস্থায়ী শিবির তৈরি করেছিলেন। সেইসময়ে তাদেরই আগ্রহে মা বর্গেশ্বরীর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত বর্ণনা অনুযায়ী এই মন্দিরের ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে একটি মাজার রয়েছে। উভয় ধর্মের মানুষই তাই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রীতির মনোভাব পোষণ করেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই।
সেই থেকে প্রতি বছর মা বর্গেশ্বরীর পূজোয় হিন্দু- মুসলিম উভয়েই সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন। অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের হাতে এই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কিছু ফলমূল তুলে দেওয়া হয়। আর নবমীতে হয় উপাদেয় গুড়পিঠে। এই প্রসাদ পাওয়ার জন্য রীতিমতো ভিড় জমে যায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন একসাথে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিয়েছেন, ভাগ করে খেয়েছেন মা বর্গেশ্বরীর প্রসাদ। এলাকার বিধায়ক সুকুমার দে সম্প্রতি জানিয়েছেন — এই পূজোটিকে হেরিটেজ পূজো হিসেবে খেতাব দেওয়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
ঠিক এমনই ধর্মীয় সম্প্রীতির নজির রাখলেন চুঁচুড়া ঝিঙেপাড়ার ‘সারদা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম।’ এখানে অষ্টমীতে কুমারী রূপে পূজিত হল ৮ বছরের সাহেবা খাতুন। শুধু সাহেবাই প্রথম নয়, এই আশ্রমের দুর্গাষ্টমীতে এর আগে গত ৪ বছর ধরে কুমারী পূজো করা হয়েছে তার দিদিকে। এই মঠের মহারাজ স্পষ্টতই জানিয়েছেন, “আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতে পূজো করি, তাই ধর্মে বিভেদ করিনা”।
হুগলী ও পূর্ব মেদিনীপুরের এই দুই পূজোই এসময়ে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।