আলোয় সেজে উঠুক দীপাবলি। গতবারের মতো এবারও তাই হতে চলেছে। আর যিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হাইকোর্টে সমস্ত বাজি নিষিদ্ধ করিয়েছেন তাঁর নামটাই আলোকোজ্জ্বল। তিনি রোশনি আলি।
প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট একপ্রকার ছাড় দিয়েই দিয়েছিল। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অনুমোদন অনুযায়ী বলা হয়েছিল, স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বেরিয়াম সল্ট যেসমস্ত বাজিতে দেওয়া থাকে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য বাজি পোড়ানো যাবে।
ঠিক তার বিপরীতেই হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। আর সেই মামলা করেছিলেন রোশনি আলি। তিনিই আদালতের কাছে আর্জি জানান গতবারের মতো এবারও বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হোক। কেননা কোডিডের ভয় এখনও কাটেনি। তার ওপর বাজি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্ষতির শিকার হতে পারেন সংক্রমিত রোগীরাও।
পরিবেশ কর্মী রোশনি আলির এই আবেদন মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রায় দেন –“করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা রয়েছে। এই অবস্থায় বাজি পোড়ানোর ও বিক্রী করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত “।
বৃহস্পতিবারই সামাজিক মাধ্যমে রোশনি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী বন্ধু রচিত লাখমানির সহায়তায় বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করার মামলা দায়ের করেছেন। ঠিক তার পরের দিনই শুনানি হয়ে যায়। জনস্বার্থ মামলায় আদালতে জয় ছিনিয়ে আনেন রোশনি।
রোশনির এই প্রতিবাদ প্রথম নয়। পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত নানান ইস্যুতে তিনি সরব হয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একাধিক প্রতিবাদ নেটনাগরিকদের নজরে পড়েছে। যাঁরা কালীপূজো, দীপাবলিতে বাজি পোড়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ‘সার্টিফায়েড ইডিয়টস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। গণেশ চতুর্থীর ধুমধাম সহকারে পূজো প্রসঙ্গেও মুখ খুলতে দেখা গেছে পশুপ্রেমী রোশনিকে। সারাবছর যাদের হাতিদের নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, তাদের একদিনের গণেশ পূজোকে ‘ভন্ডামি’ আখ্যা দেন রোশনি।
একাধারে পরিবেশ প্রেমী ও ফিল্মমেকার রোশনি আলি যেমন অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে মতামত রাখেন, তেমনই সীতার অবমাননা নিয়েও তিনি মুখ খোলেন।তবে নেটিজেনদের বড় অংশের হৃদয় সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছিল ‘সিএএ’ নিয়ে রোশনি আলির প্রতিবাদ।
রোশনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখেন, “আমার বাবা ছিলেন মুসলিম, আমার মা একজন হিন্দু। আমার যাবতীয় প্রাপ্ত শিক্ষায় ভীষণরকম খ্রিস্টান প্রভাব রয়েছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আমার একজন করে পিসি রয়েছেন। আর আমার দিদিমা ছিলেন ব্রিটিশ”।
রোশনি আলির নিজের ধর্ম তাহলে কোনটা? নিজেই উত্তর দিয়েছেন রোশনি, “আমি রূপোর তৈরি বুদ্ধের পেনডেন্ট পরি গলায়। আবার আমার পাসপোর্ট বলে আমি মুসলিম। প্রতি সপ্তাহে আমি একটা কালী মন্দিরে যাই, আবার আমার আলি পদবিটাকেও ভালোবাসি, কেননা ওটা বাবার থেকে পাওয়া”।
নিজেই সর্বধর্ম সমন্বয়ের জীবন্ত প্রতিমূর্তি রোশনি আলি আজকের সমাজে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।