অন্যদিনের মতোই শুক্রবার কর্মব্যস্ত আগ্রার জেলা হাসপাতাল। ডাক্তার, নার্সরা যে যার শিফ্টে দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছেন। রোগীদের প্রাত্যহিক দেখভালে ব্যস্ত সবাই। এমনই সময় ঠিক সকাল ৯ টা নাগাদ হাঁপাতে হাঁপাতে হসপিটালে ঢুকে এলেন এক পুরোহিত। ডাক্তারের খোঁজে রীতিমতো কান্নাকাটি জুড়ে দেন তিনি।
এমার্জেন্সি বুঝে এসে হাজির হন ডাক্তার। পুরোহিত কাঁদো কাঁদো অবস্থাতেই জানান–“আমার গোপালের হাত ভেঙে গেছে ডাক্তারবাবু! এক্ষুনি প্লাস্টার করে দিন!”
ডাক্তারবাবু তখন পুরোহিতকে একা দেখে ইতিউতি তাকিয়ে গোপালকে খুঁজছেন। কার হাত ভেঙেছে! সে গেল কোথায়!
পুরোহিত হাতের চেলিতে মোড়া ধাতুর তৈরি ছোট্ট কৃষ্ণ বিগ্রহ এগিয়ে ধরেন, “এই যে আামার গোপাল ডাক্তারবাবু! সকালে পূজোর সময় স্নান করাতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ওঁর হাতটা ভেঙে গিয়েছে”।
ডাক্তার নার্স সকলেই হকচকিয়ে যান। বলে কী লোকটা! পুরোহিতের কাতর অনুনয় তখনও চলছে , “এই গোপালের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক! তাই ছুটে এসেছি চিকিৎসার জন্য। আপনি ওর হাতটা দয়া করে ভালো করে দিন!”
পুরোহিতের কান্নাভরা চোখ দেখে এই অনুরোধ ফেলতে পারলেননা ডাক্তার। বাধ্য হয়েই বিগ্রহের হাতে প্লাস্টার করে দিতে হল! হাসপাতালের রেজিস্টারে পেশেন্টের জায়গায় নাম লেখা হল। ‘শ্রীকৃষ্ণ’।
ভক্তের এই ভালোবাসা আর আবেগের বহু কিংবদন্তি প্রচলিত আছে আমাদের ভারতে তথা বাংলায়। তবে আজকাল সচরাচর এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়না চট করে। আগ্রা জেলা হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট অশোক আগরওয়াল বললেন,” এক ভক্ত তাঁর বিগ্রহের চিকিৎসা করাতে ছুটে এসেছিলেন। আমরা তাঁর আবেগকে সম্মান জানিয়ে ‘শ্রীকৃষ্ণ’ নামে এন্ট্রি করিয়ে চিকিৎসা করেছি “।
খবর সূত্রে জানা গেছে এই পুরোহিতের নাম লেখ সিংহ। ইনি গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে অর্জুন নগরের খেড়িয়া মোড়ের কাছে পাথোয়াড়ি মন্দিরে নিত্যপূজার কাজ করে আসছেন। ভক্তের সঙ্গে ভগবানের সম্পর্ক যে কত গভীর হতে পারে, এই ঘটনাই তার উজ্জ্বল প্রমাণ।