চলে গেল দুর্গাপূজো ২০২১। উৎসবে মেতে রঙিন হয়ে উঠল সবাই। শুধু কুমিল্লার নানুয়া দিঘিতে দুর্গাপুজো হলনা। তার বদলে হল অনেক কিছুই। প্রতিমা ভাঙা হল। ‘বাংলাদেশ বিশ্ব হিন্দু ঐক্য পরিষদ’ প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা ‘কোরান’ বাঁচাতে উদ্যত হলেন, ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া ও বিখ্যাত দুএকটি পূজো কমিটি নিজেদের পূজো ভুলে প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্মের মর্যাদারক্ষায় অবতীর্ন হলো, কুনাল ঘোষ উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, সেটা মনে করিয়ে আজ আবার ট্যুইট করে প্রসঙ্গটা উস্কে দিলেন, হিন্দু ভাইয়েরা সাবাশ বললেন, মুসলিম ভাইয়েরা কুনালকে ন্যক্কারজনক ভাষায় আক্রমণ করলেন — এসবই হল একটা গুজবকে ঘিরে।
ঘটনাটা সংক্ষেপে এই, কুমিল্লা জেলার নানুয়া দিঘির দুর্গাপূজোয় কোরান -কে অপমান করা হয়েছে এমনই একটি গুজব ছড়িয়ে যায়। এই গুজবে ইন্ধন দিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক ছবি — যেখানে হনুমানের পায়ের কাছে কোরান রাখা আছে। ব্যস্ , এখান থেকেই ঝামেলা শুরু। স্থানীয় মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে পরিচিত কিছু লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে দেন। এরপর কুমিল্লার সোশ্যাল মিডিয়া ‘হ্যাশট্যাগ আক্রান্ত মা দুর্গা’লেখায় ভরে যায়।
এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে লেখিকা তসলিমা নাসরিন ট্যুইট করেন, “কিছু হিন্দুবিদ্বেষি মানুষ এমন করেছেন। তারা গোপনে কুমিল্লার দুর্গাপূজো প্যান্ডেলে হনুমানের পায়ে কোরান রেখে যান, এই ঘটনা ইচ্ছাকৃত। আশা করছি সরকার এর বিচার করবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করবে”।
প্রসঙ্গত বিতর্কিত ওই ছবিটা আসলে ফোটো এডিট করে তৈরি করা — এমন সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। কিন্তু কারা করল এমন কাজ? সে প্রশ্ন অবান্তর মনে করে দলে দলে মানুষ প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। বাদ যাননি ভারতীয়রাও। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পূজোয় যুক্ত অনেকেই প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে নামেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা “বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে রাজ্য ও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাই”। প্রশ্ন করা হয়েছে,”নিজ নিজ ধর্ম রক্ষা করা সাম্প্রদায়িক কি?”
প্রশ্নটা হয়তো প্রাসঙ্গিক। কিন্তু সমস্যা হল — এই প্রশ্ন তো সকল ধর্মাবলম্বীরাই করতে চাইবেন, আর সেই প্রশ্নকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটবে অন্য কিছু মানুষ।
প্রসঙ্গত, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টাই করেছেন ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মওলানা ইসমাইল হোসেন। গোটা ব্যাপারটাই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি মিটিংয়ে তিনি বলেন, “কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা নাটক, ষঢ়যন্ত্র ও দেশের ভেতরে অশান্তি তৈরির জন্য করা হয়েছে। … সকল ধর্মের মানুষের সাথে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখেএ একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসাই আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম ও রাসুলের শিক্ষা”।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে মনে করিয়ে দিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন , “মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু মুসলিম সহ সকল ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন বলেই আমরা এই সোনার বাংলা পেয়েছি”।
যদিও বিকৃত ছবি, উদ্দেশ্য প্রণোদিত মানুষের ষঢ়যন্ত্র এসব কোনো কথাতেই বিবাদ সহজে থামেনি। সক্রিয় হয়েছে ভারতীয় রাজনীতি। কুমিল্লার সেই বিবাদকে আরও একবার ট্যুইটারে উস্কে দিয়ে কুনাল ঘোষ গতকাল লিখেছিলেন, “বিজেপির সস্তা মেকি হিন্দুত্বের নাটক নয়, কার্যকর ভূমিকা নিক কেন্দ্র। আমরা ভারত বাংলাদেশ দুদেশেরই সংখ্যালঘু সুরক্ষার পক্ষে”।
আজ সেই সূত্র ধরে আবারও তিনি ট্যুইট করে বিজেপিকে লক্ষ্য করে “চার আনার বিজেপি নেতাদের সস্তা নাটক” বলে কটাক্ষ করেন।
কিন্তু জনসাধারণ! তাঁরা কোন পক্ষে?