সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুম্বই সফর নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। বিগত তিনদিনেই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির একাধিক কটাক্ষে বিদ্ধ হচ্ছেন মমতা। ‘জাতীয় সংগীত অবমাননা’-র অভিযোগের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান নিয়ে নতুন এক বিতর্ক তুলেছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। পক্ষান্তরে যা বাংলা ভাষাকেই অপমানের সামিল, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। তিনি বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাতে চান, তাই জয় ভারত না বলে জয় বাংলা বলেন। ‘
এই আশ্চর্য যুক্তির মানে খুঁজে পাচ্ছেননা বাংলার বুদ্ধিজীবি মহল।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেস যাতে জাতীয় দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতেই মমতার মুম্বই সফর, এটা বোঝাতে বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ বলেন, “একটা দলকে জাতীয় দল হিসেবে থাকার জন্য সাধারণ নির্বাচনে কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হয়। মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় তাঁর জাতীয় দলের মর্যাদা হারানোর আশঙ্কা করছেন তাই ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য একটা কৌশল তৈরি করতেই মুম্বই গিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেছেন।”
এরপরেই মমতার মুসলিম প্রীতি ও মুম্বই সফরের পারস্পরিক তুলনা টেনে সৌমিত্র খাঁ বলেন, “মমতা ইনশাআল্লাহ বলেন এখন আবার মুম্বইতে গিয়ে গণপতি বাপ্পা মোরিয়া জপ করছেন।”
কিন্তু তারপরেই এমন একটি মন্তব্য করে বসলেন বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ, যা কিনা পরোক্ষে বাংলা ভাষারই অপমানের সামিল বলে মনে করছেন অনেকেই। সৌমিত্র বলেন, “মমতা সবসময় জয় ভারতের বদলে জয় বাংলা বলেন। তিনি জাতীয় সংগীতকেও সম্মান করেননা, জয় ভারত বলতে চাননা। ভারতের অখন্ডতা ভাঙার উদ্দেশ্যেই সবসময় জয় বাংলা বলেন। তিনি আসলে পশ্চিমবঙ্গকে ‘পশ্চিম বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাই জয় বাংলা, জয় মহারাষ্ট্র কিন্তু জয় ভারত নয়! ইনশাআল্লাহ বলে তিনি পশ্চিম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হতে চান!”
এখানেই বড় দুটি প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার বিদ্বজ্জন — ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান বিরোধী বিজেপি কি বাংলা ভাষাকে অবমাননা করতে চাইছেন? ‘জয় মহারাষ্ট্র, জয় বাংলা’ অখন্ড বোঝাতেই কি ব্যবহৃত নয়? জাতীয় সঙ্গীতে প্রত্যেকটি প্রদেশের নাম উচ্চারণ করেই ‘অখন্ডতা’ রক্ষার চেষ্টা করেছেন ‘বাঙালি ভারতীয় বিশ্বনাগরিক’ রবীন্দ্রনাথ।
বিদ্দজ্বনের বক্তব্য, বিজেপি কুযুক্তি তুলে আসলে বাংলা ও মারাঠি দুই ভাষাকেই অবমাননা করতে চান।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ ট্যুইটে বলেছেন, “বিজেপি না বোঝে প্রকৃত জাতীয়বাদ, না বোঝে জাতীয় সংগীত, না বোঝে জাতীয় সংহতি।”
বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁর বিভেদমূলক মনোভাব সেই বক্তব্যের দিকেই ইঙ্গিত করছেনা কি! সব শেষে বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁর জেনারেল নলেজ বাড়াতে বিদ্বজ্জনেরা জানাতে চান–‘বাংলাদেশ’ ভাষার ভিত্তিতে গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্র, জাতের ভিত্তিতে নয়।
‘প্রকৃত জাতীয় সংহতি বোঝেনা বিজেপি’ এই বক্তব্যে তৃণমূল সম্পাদক কুনাল ঘোষ কি সেই অজ্ঞতার দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন? সেই মতামত ব্যক্তিক বা রাজনীতিগতই থাকছে।
তবে দলমত নির্বিশেষে কিছু বাঙালি জনগণ বিজেপির দিকে প্রশ্ন রাখলেন, ‘জয় বাংলা ‘ বললে অসুবিধা কোথায়? তেমনই, মারাঠিরা জানতে চান ‘জয় মহারাষ্ট্র’ বললে কি অসুবিধা?
বাকি নামগুলো জাতীয় সংগীতেই বলা আছে।