বাংলা মিডিয়াম বিতর্ক এই মূহুর্তে ছেয়ে ফেলেছে সমাজ মাধ্যম। কারণটা তেমন কিছু নয়, আবার অনেক কিছুই বটে। রেডিও জকি অয়ন্তিকা সম্প্রতি এক বিতর্কসভায় বলেছেন, বা বলা ভাল প্রশ্ন রেখেছেন, “বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়েরা কি ইন্টারভিউ ক্র্যাক করতে পারে?” প্রশ্নটা একটু নেগেটিভ ঢঙেই তোলা, সেহেতু মানেটা এইদিকেই ইঙ্গিত করছে –বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার যোগ্যতা নেই। স্বভাবতই রেডিও জকি অয়ন্তিকার এই মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলকালাম চলছে।
নেটনাগরিকরা তাদের কমেন্টে, পোস্টে রীতিমতো ট্রোল শুরু করেছেন অয়ন্তিকাকে লক্ষ্য করে। কারুর বক্তব্য, “আমি বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র। ইন্টারভিউ বাংলাতেই দিয়েছি। যথেষ্ট বড় কর্পোরেট হাউজে চাকরি করি আমি।” তো পাশাপাশি কারুর মন্তব্য, “আমাদের পাতি সিলেবাস ছিল এটা কে বলল? আমাদের কোনো জ্ঞান নেই এটাই বা আপনি জানলেন কীকরে?”
কেউ কেউ আবার সরাসরি অয়ন্তিকাকেই প্রশ্নবাণ ছুঁড়েছেন, “দিদি আপনি যেখানে চাকরি করতেন সেখানেও তো বাংলাই বলতেন। আপনিও তো ইন্টারভিউতে ক্র্যাক করেছেন দিদি!”
রেডিও মির্চির এককালীন রেডিও জকি অয়ন্তিকা বোঝানোর চেষ্টা করে বলেছেন, “আমি কাউকে টার্গেট করে কথাটা বলিনি। একটা বিতর্ক সভার প্রেক্ষিতে কথাটা তুলেছিলাম।” এই বক্তব্যে যদিও ছাড় পাননি অয়ন্তিকা।
সোহিনী চক্রবর্তী নামে এক নেটিজেনের জোরালো দাবি, “ভুল করছেন। আপনি যেমন কাউকে টার্গেট করেননি, আমরাও আপনাকে টার্গেট করছিনা। আপনি আপনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটা বলবেন বাংলা মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা ইন্টারভিউ ক্র্যাক করতে পারেননা।”
বোঝাই যাচ্ছে বাংলা ভাষার অপমানে অনেকেরই আত্মাভিমানে ঘা লেগেছে। লাগাটাই স্বাভাবিক। অন্তত এই সূত্র ধরে এটা বোঝাতে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বাংলা ভাষাকে ‘পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি’ আজও কতখানি ভালবাসে! তার ঠিক পাশাপাশি বাস্তব চিত্রটা কী? বাংলা ভাষা বাঁচানোর দায় কি আদৌ কারুর রয়েছে?
পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ’ প্রকল্পে প্রাইমারিতে ইংরেজি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে ইংরেজি ভাষায় দুর্বল হয়ে রীতিমতো ভুক্তভোগী একটা গোটা জেনারেশন। যার ফলশ্রুতিতে রাস্তাঘাটে গজিয়ে ওঠা একাধিক ইংরাজি মাধ্যম স্কুল। যারা প্রতিবাদ করছেন, হয়তো তাদেরই একাংশ নিজের ছেলেময়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতেই চাইবেন। এই চিত্রটাও সত্যি, কেবলমাত্র ঝরঝরে ইংরেজি বলতে পারার জন্য কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও মোটামুটি চলনসই একটি চাকরি অনায়াসেই পেয়ে যাওয়া যায়।
বহু সাংস্কৃতিক কর্মী তাঁদের মতামত দিয়ে বাংলা ভাষার পক্ষ অবলম্বন করে পোস্টে কলম/ কিপ্যাড ধরেছেন। এটা ভালো লক্ষণ, যখন একটি বিতর্কসভার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বাংলা ভাষার রক্ষা নিয়ে ঝোড়ো হাওয়া উঠল পশ্চিমবঙ্গে!