মেয়ে হয়েছে। খবর শুনেই জয়পুরের কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ২৬ বছরের যুবক সুভাষ রায়। ফিরছিলেন সেই অভিশপ্ত ট্রেন বিকানের-গৌহাটি এক্সপ্রেসে। পথের মাঝেই বিধ্বংসী দুর্ঘটনা। বাবার সাথে আর কোনওদিন দেখা হবেনা মেয়ের! ভেঙে পড়েছেন কোচবিহারের দেওয়ানবশ গ্রামের সুভাষ রায়ের পরিবার; বাবা-মা-স্ত্রী-শোকে নিথর। আড়াই মাসের মেয়েটাকেও দেখে যেতে পারলেননা দুর্ঘটনায় নিহত সুভাষ!
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ময়নাগুড়ির দোমহনীতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। আচমকা ব্রেক কষায় লাইনচ্যুত হয়ে একটার ওপর একটা ঘাড়ে উঠে দুমরে বেঁকেচুরে যায় ৬ টি বগি। বিধ্বংসী এই দুর্ঘটনায় আহত প্রায় ২০০ জন। এখনও পর্যন্ত ৯ জন মৃত বলেই জানা যাচ্ছে। যাঁদের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করতে পারা গিয়েছে। একজন সুভাষ রায়, ইনি জয়পুর থেকে ফিরছিলেন। আর একজন ২৩ বছরের তরতাজা যুবক চিরঞ্জিত বর্মন। তাঁর দেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর মা।
চিরঞ্জিতের মায়ের বর্ণনা থেকেই জানা যায়, দুর্ঘটনার ওই সময়টায় ফোনেই মায়ের সাথে নিশ্চিন্তমনে কথা বলছিলেন চিরঞ্জিত। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফেরার কথা। এরপর অনেক কাজ।…কিন্তু কথা বলতে বলতেই কান ফাটানো এক ভয়ানক শব্দ। এরপরেই লাইন কেটে যায়।
মা জানাচ্ছেন, গলব্লাডারে স্টোন ছিল চিরঞ্জিতের। জলপাইগুড়ির স্থানীয় হাসপাতালে অপারেশনের জন্য খরচ বলেছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। একসাথে এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। সেকারনেই অন্য রাজ্যে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করে ফিরছিল সে। মাঝপথেই এই দুর্ঘটনা। ‘চিকিৎসা আর কার হবে? সেই ছেলেটাই যে আর রইলনা!’ ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করে গুমরোনো কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা।
বিকানের-গৌহাটি এক্সপ্রেসের এই বিধ্বংসী দুর্ঘটনা আরো কতজনের পরিবারে শোক নামিয়ে আনল! বুকে পাথর রেখে এখন তারই পরিসংখ্যান চলছে।