দেশের গন্ডি পেরিয়ে হিজাব-বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। এবার অমুসলিম পড়ুয়াদের হিজাব পরানোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলল ‘হিন্দু মহাজোট’।
বলে রাখা ভালো, মহিলাদের হিজাব পরা উচিত বা অনুচিত তর্কটা আদৌ তা নিয়ে হয়নি। গোড়া থেকেই এই বিতর্কে ইন্ধন যুগিয়েছে যুক্তিবুদ্ধিহীন অন্ধ আক্রমণ। সূত্রপাতটা হয় কর্ণাটকের উদুপিতে। ‘হিজাব’-কে ইসলামিক ‘সিম্বল’ হিসেবে বিরোধিতা শুরু হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। বিরোধিতা করেছিল একদল ‘গেরুয়া স্কার্ফ’ পরা হিন্দু শিক্ষার্থীরা।
এই নিয়ে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই সওয়াল করেছেন। একদিকে যেমন নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তা মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, “এটা মুসলিম মহিলাদের শিক্ষা অথবা হিজাব, দুটোর একটা বেছে নেওয়ার চক্রান্ত।” তেমনই চিকিৎসক লেখিকা তসলিমা নাসরিন হিজাব পরা উচিত নয়, তর্কটাকে সেইদিক থেকে দেখেছেন। এই গোটা চিত্রটাই সাধারণ মানুষের সামনে বিপরীতার্থক মানে নিয়ে দৃশ্যনীয় হয়ে ওঠে। এরপর সেই আঁচ বাংলাদেশেও ছড়ায়।
গত শুক্রবার প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিক বৈঠকে হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, “যশোরের আদ্-দ্বীন সাকিনা মেডিকেল কলেজে অমুসলিমরা হিজাব পরতে স্বীকার না করলে তাদের অ্যাডমিশন নেওয়া হচ্ছেনা।” এক্ষেত্রে ‘আাকিজ গ্রুপ’-র চালিত নির্দেশিকা মেনে কলেজে মুসলিম ও হিন্দু উভয় শিক্ষার্থীকেই হিজাব পরতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে তারা জানান।
হিন্দু মহাজোটের বক্তব্য অনুযায়ী, “এই কলেজটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ মহিনুদ্দিনের পিতা শেখ আকিজ উদ্দিন। ইনি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হিন্দু শরনার্থীদের সম্পদ লুট করার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।” এই প্রতিষ্ঠানগুলির মালিকরা মূলত পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন বলে তথ্য দিয়ে জানায় হিন্দু মহাজোট। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর আকর্ষণ করা হয়েছে। কেননা, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায় অনুসারে, কারোকেই তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে পোশাক পরতে বাধ্য করা যায়না। এই প্রতিষ্ঠানগুলি সেই রায় অমান্য করে চলেছে, এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছে হিন্দু মহাজোট।
তবে এক্ষেত্রেও দুটি বিতর্কের সমান্তরাল দুটো দিক পরিলক্ষিত, ১) মহিলাদের পোশাক পরার স্বাধীনতা, ২) ধর্মীয় চিহ্ন বহন করার স্বাধীনতা — যে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা এবং এর সমাধান কোনও বিশেষ ধর্মীয় সংগঠনের এক পক্ষের বিরোধিতা দিয়ে আদৌ সম্ভব নয়। সচেতন মহলের একাংশ তাই মনে করছেন।