বাংলার অবিস্মরণীয় চলচ্চিত্রকার, শিল্পী, লেখক সত্যজিত রায়ের জন্মদিবস আজ ২রা মে। এমন বহুমুখী প্রতিভার স্ফুরণ খুব কমজনের মধ্যেই দেখা যায়। তাঁর চলচ্চিত্রের পরিচালনা থেকে কাহিনী, চিত্রনাট্য, চরিত্র নির্বাচন এমনকি সঙ্গীত পরিচালনাও তিনি নিজে করেছেন। বাংলা সাহিত্যকে ফেলুদা সিরিজ, প্রফেসর শঙ্কু, বঙ্কুবাবুর মতো উপহার দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন সত্যজিত রায়। তাঁর কাজের ব্যাপ্তি বলে শেষ করা যাবেনা। আজকের এই দিনটায় বরং আমরা জেনে নেবো এমন এক ঘটনার কথা, যা একেবারে অজানা না হলেও সাধারণ মানুষের কাছে খুবই কম আলোচিত হয়।
চলচ্চিত্রে আন্তর্জাতিক মানের শ্রেষ্ঠতম পুরস্কার ‘অস্কার’ পেয়েছিলেন সত্যজিত রায়। বলা বাহুল্য এই এই পুরস্কার তাঁর স্বীকৃতির পথকে আরো বিস্তারিত করেছে। তবে আরো একটি ঘটনার কথা এখানে ফিরে দেখা হবে, যা সত্যিই বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে এক অমূল্য স্বাক্ষর রাখতে পারতেন সত্যজিত রায়। সেটা সম্ভব না হওয়ার পেছনে রয়েছে এক প্রতারণার ইতিহাস।
১৯৬২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ নামের কল্পবিজ্ঞান গল্প। যেখানে একটি মহাকাশ যান নিয়ে কাহিনী দানা বেঁধেছে। একটি গ্রামের পুকুরে নেমে আসা মহাকাশ যান, যেটিকে ভ্রান্তিবশত গ্রামবাসীরা মন্দির ভেবে পূজো করতে থাকেন। নিজের এই গল্পকে ভিত্তি করেই ঠিক পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে একটি চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন সত্যজিত, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য এলিয়েন।’ এই সিনেমাটি ভারত-আমেরিকা যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবার কথা ছিল। কলম্বিয়া পিকচার্স ও পিটার সেলার্সের প্রযোজনায় সেই কাজ শুরুও হয়েছিল। ছবিটির নায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো।
তথ্যসূত্র অনুসারে, ছবিটি শুরু হওয়ার প্রাক্কালে সত্যজিত রায় জানতে পারেন চিত্রনাট্যের সত্ব তাঁর নামে থাকবেনা এবং তিনি কোনও পারিশ্রমিকও পাবেননা! ঘটনাচক্রে ব্রান্ডোও সিনেমাটি থেকে সরে যান। আর ওইরকম একটি সংবাদ জানার পর সত্যজিৎ রায়ও নিজেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু চিত্রনাট্যের মাধ্যমে গল্পের আইডিয়া ততদিনে প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে একাধিক জায়গায় সত্যজিত নিজে এবং তাঁর জীবনীকার অ্যান্ড্রু রবিনসন আলোচনা করেছিলেন।
এরপর ১৯৮২ সালে স্টিফেন স্পিলবার্গের বিখ্যাত ছবি ‘ইটি – দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’ মুক্তি পাওয়ার পর অনেকেরই নজরে আসে –ছবিটির সাথে সত্যজিতের চিত্রনাট্যের অনেকাংশে মিল রয়েছে। সত্যজিত রায় দাবি করেছিলেন, “দ্য এলিয়েন’ -এর চিত্রনাট্যের খসড়াটি আমেরিকায় এভাবে ছড়িয়ে না পড়লে স্পিলবার্গের ‘ইটি’ ছবিটি বানানো সম্ভব হতনা।”
অর্থাৎ সেইসময়ে সত্যজিতের কাহিনী চিত্রনাট্যের স্বীকৃতিসমেত ভারত-আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে ছবিটি তৈরি হলে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রজগতে, কল্পবিজ্ঞান নির্ভর ছবির সূচনাতেও আমরা সত্যজিত রায়ের নামটিই দেখতে পেতাম। এটা মনে করে কিঞ্চিৎ আক্ষেপ রয়েই যায়।