মান্না দের গাওয়া ‘কফিহাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ শুধু জনপ্রিয়ই নয়, এর সাথে জড়িয়ে বাঙালির নস্টালজিয়া। এমনকি আশি নব্বই দশকে বাংলা ব্যান্ডের রমরমা বাজার সত্ত্বেও এই গানটির জনপ্রিয়তায় একটুও ভাঁটা পড়েনি। নতুন প্রজন্ম এই গানকে সমসাময়িক বলেই আপন করে নিয়েছিল। এখনও এফএম রেডিওতে এই গান বাজলে অনেকেই গানের সাথে গলা মেলান।
এককথায় কালজয়ী সৃষ্টি যাকে বলে ‘কফিহাউস’ ঠিক তাই। কিন্তু পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত এই গান সম্পর্কে একেবারে ভিন্ন মত রাখলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গানটিকে আছড়ে কেচেছেন তিনি। গানটিকে ‘সাত ন্যাকার ঘ্যানঘ্যানানি’ আখ্যা দিয়ে বলেন ‘নস্টালজিয়ারও একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত।’ স্বভাবতই এই পোস্টে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে।
কিন্তু এই গান তো যথেষ্টই জনপ্রিয়! এমনকি অনেক নতুন শিল্পীই টিভি শোয়ের মঞ্চে কফিহাউস গানটিকেই গাইবার জন্য বেছে নেন! এর কারণও বিস্তারিত পোস্টে জানিয়েছেন সোহিনী দাশগুপ্ত। একটি সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন , “সকালে এফএম চ্যানেলে গানটা শুনতে শুনতে এই কথাগুলোই মনে হচ্ছিল সেই জায়গা থেকেই বলেছি। এগুলো আমার উপলব্ধি।”
‘সেই সাতজন নেই আর টেবিলটা তবু আছে সাতটা পেয়ালা আজো খালি নেই …’ বিখ্যাত এই গানের কলি সম্পর্কে পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রীর মতামত –“গানটি কিছু হেরে যাওয়া মানুষের, কয়েকজন হতাশ মানুষের ব্যর্থতার কাহিনী এই গান। তাঁরা তাঁদের দুঃখের কাঁদুনি গাইছেন।”
তবে সোহিনী সমসময়ের নিরিখে কথাগুলি লিখলেও নিজেই বলেছেন, “আটের দশকে প্রথম এই গান শুনেছি। ভীষণ ভালো লেগেছিল সেইসময়। যেমন সুর তেমনই কথা। কিন্তু যত বড় হয়েছি, বারবার শুনতে শুনতে মনে হয়েছে একটি মেয়ের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলা হয়েছে।” আর এই জায়গাটাকেই একদম বরদাস্ত করতে পারেননি সোহিনী। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, “সবাই খুব খারাপ আছেন একমাত্র সুজাতা ছাড়া এবং তিনি সুখী বলে তাঁর সুখকে কটাক্ষ করা হয়েছে! এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আপামর গানপ্রেমীদের প্রিয় গান হলেও সোহিনী দাশগুপ্ত যে যুক্তিগুলি দিয়েছেন সেগুলো উড়িয়ে দেবার নয়। তবে এটা একান্তই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। সেই জায়গা থেকেই আহত হয়েছেন তিনি। সেটা উল্লেখও করেছেন। বলেছেন, “স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গা থেকেই ফেসবুকে এই মন্তব্য লিখেছি। সুরকার, গীতিকার বা গায়ককে অপমান করতে নয়।” যদিও এমন একটি গান সম্পর্কে কটু মন্তব্য করায় তাঁকে নানাপ্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।উল্লেখ্য, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, সুপর্ণকান্তি ঘোষের সুরে ও মান্না দে -র কন্ঠে গাওয়া এই গান এখনও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। যদিও মান্না দে তাঁর সমকালে নতুন ধারার গানকে একেবারেই গ্রহণ করেননি, বরং আক্রমণই করে গিয়েছিলেন।