ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) সম্প্রতি একটি রিপোর্টে জানিয়েছে মহাকাশই ওষুধ গবেষণার আদর্শ জায়গা। তাই এই মূহুর্তে মানব সমাজের সবচাইতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, অর্থাৎ কোভিড -১৯ এর ওষুধের গবেষণার প্রস্তুতি চলছে মহাকাশে। শুধু কোভিড নয়, তার সাথে ক্যান্সার, অ্যালঝাইমার্স এর মতো আরও কিছু জটিল রোগের ওষুধ নিয়েও মহাকাশে চলবে গবেষণা।
কেন মহাকাশকেই আদর্শ ক্ষেত্র বলা হচ্ছে?
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জানাচ্ছে, ওষুধ নিয়ে আরও নির্ভুল ও উন্নতমানের গবেষণার জন্য একমাত্র মহাকাশই সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। তার একটা কারণ — ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’ অর্থাৎ ভরশূন্য অবস্থা। এই অবস্থায় প্রয়োগ করা ওষুধ তার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করতে ও তাদের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
আর দ্বিতীয় কারণ–মহাকাশে বায়ুমন্ডল না থাকার ফলে সেই স্থান নানারকম দূষিত কণা থেকেও মুক্ত।
তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত মহাকাশ স্টেশনেই পৃথিবীর প্রথম ওষুধ গবেষণা প্রক্রিয়া হতে চলেছে। ভরশূন্য অবস্থায় বায়ুদূষণমুক্ত পরিবেশে মানুষের শরীরে ওষুধ কীভাবে কাজ করে, কী উপায়ে তার প্রয়োগ আরও সঠিকভাবে করা যায় পরীক্ষা হবে সেটাই।
প্রথমত এই মূহুর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কোভিড-১৯ এর ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ নিয়েই গবেষণা শুরু করবেন বিজ্ঞানীরা। এই ওষুধ মানবদেহের কোষে অবস্থিত সাইক্লোডেক্সট্রিন নামক উপাদানের ওপরেই কাজ করে। এবার সেই ওষুধ মহাকাশে থাকা অবস্থায় প্রয়োগ করার ফলে আরও সঠিক ও নিখুঁত করে তুলে ‘রেমডেসিভির’ ওষুধকে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
‘রেমডেসিভির’ কী?
রেমডিসিভির হলো এক ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ, যা ‘গিলিড সাইন্সেস’ নামের একটি ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থার বানানো। কোভিড-১৯ এর প্রতিকার করতে জাপান ও আমেরিকা ২০২০ সালের মে মাসে এই ওষুধ প্রয়োগের অনুমতি দেয়। যদিও একেবারে মূমুর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রেই এখন পর্যন্ত রেমডিসিভির প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রচলিত ‘ক্লোরোকুইন’ ওষুধের চাইতে এর কার্যক্ষমতা বেশি হলেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখনও অজানা। ফলে চাইলেও এ ওষুধ নির্বিচারে প্রয়োগ করা যায়না ।
সেক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী মহাকাশে ওষুধের এই গবেষণায় ‘রেমডিসিভির’ এর গতিপ্রকৃতি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানাও সম্ভব হতে পারে। যার ফলে কোভিডের আরও সঠিক ও সহজ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে এই মহাকাশ গবেষণা ।