ঢাকার বনেদি এলাকা বনানীতে গত মঙ্গলবারই এক তরুণীর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে তাকে ঠেলে দিয়েছে শ্বশুর ঘরের পরিবার, তার প্রমাণ শরীরের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। অথচ এই মেয়েটির এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ছিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটির নৃত্যকলা বিভাগের এই ছাত্রীকে ছ’মাস আগেই বিয়ে দিয়েছিল পরিবারের লোকজন। আর ছ’মাসেই মৃত্যু ঘনিয়ে এল তার। এলমা চৌধুরী মেঘলা। সম্প্রতি এই মেয়েটির অকাল মৃত্যুতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোচ্চার হলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
ফেসবুক পোস্টে মেয়েটির পরিস্থিতি আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে তিনি বলেন, “মেঘলা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে তার স্বামী শারীরিক নির্যাতন করছে বিয়ের পর থেকেই। এক সময় নির্যাতন করতে করতে লোকটি বিয়ের ছ’মসের মধ্যেই মেঘলাকে মেরেই ফেলেছে। মেঘলা এখন মৃত।”
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এত অত্যাচার মেয়েটি সহ্য করল কেন! এর উত্তরও দিয়েছেন তসলিমা। তিনি লিখছেন,
“অত্যাচারীর বাড়ি থেকে মেঘলা পালায়নি কেন? আর দশটা মেয়ের মতোই হয়তো ভেবেছে, পালিয়ে যাবো কোথায়! তাই অসহায়ের মতো অত্যাচার সহ্য করেছে!”
শ্বশুরবাড়ি তো বটেই। এক্ষেত্রে মেয়েটির বাপের বাড়িকেও রেয়াত করেননি তসলিমা নাসরিন। মেয়েটির মৃত্যুর জন্য ধিক্কার দিয়ে বলেছেন, “বাপ মা’য়ের কথা আর কী বলবো। তারা তো অপদার্থ কম নয়। নির্যাতিত হচ্ছে মেয়ে, জানার পরও মানিয়ে নে, সহ্য কর বলতে থাকে। ক’জন বাবা মা মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের কাছে নিয়ে যায়, এবং নির্যাতককে তালাক দেওয়ার পরামর্শ দেয়! মেয়ের কথা তারা ভাবে না, ভাবে লোকের কথা। লোকে কী বলবে!”
মেঘলার ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা তার উচ্ছল, প্রাণশক্তিতে ভরপুুর চেহারার স্মৃতি ধরে রেখেছেন। যা বিয়ের ছ’মাসেই ক্রমাগত বদলে যেতে থাকে। এমনকি তাকে ফোন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও দূরে থাকতে বাধ্য করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এই অসহনীয় যাপনচিত্র মনে করে তসলিমা পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, “প্রতিটি দেশেই নির্যাতিত মেয়েদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থাকা উচিত। কোনও মেয়ে নির্যাতিত হওয়ার শুরুতেই যেন সেখানে আশ্রয় নেয়। সেখানে বিনেপয়সায় তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, খাওয়া পরা আলোচনা পরামর্শ ইত্যাদি দেওয়া হবে, ডাক্তার , মনোবিদ দেওয়া হবে, যে কাজে তারা পারদর্শি, সে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অতঃপর স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
ধনীরা যেন অর্থহীন কাজে টাকা না ঢেলে নির্যাতিত মেয়েদের আশ্রয়কেন্দ্রে টাকা ঢালেন। সরকার থেকেও যেন সব রকম সাহায্য করা হয়। সেইসব আশ্রয়কেন্দ্রের যেন চব্বিশ ঘণ্টা ফোন খোলা থাকে, যে কোনও মেয়েই বিপদে পড়ে যেন ফোন করতে পারে। রেডিও টেলিভিশনে পত্র পত্রিকায় যেন এর বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যে মেয়ে বিপদে পড়েছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রের রেসকিউ বাহিনী যেন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে।”
নিজের ফেসবুক পোস্টে এমনই এক পরিকল্পিত আশ্রয়স্থলের কথা বর্ণনা করেছেন তসলিমা নাসরিন। এমনকি “বাংলাদেশ”-কে “ভয়ঙ্কর নারীবিদ্বেষী দেশ” বলেও উল্লেখ করেছেন। প্রতি পদে অত্যাচারের উদাহরণ তুলে ধরে তসলিমার দাবি “এখানে শয়ে শয়ে আশ্রয়কেন্দ্র” গড়ে তোলা উচিত।
পোস্টের শেষে তসলিমার আবেদন “আর যেন কোনও মেয়েকে মেঘলার মতো মরতে না হয়।”