VoiceBharat News IMG 20211209 112524

সাম্প্রদায়িক হিংসার খবর ছড়ানোর অভিযোগে আটক দুই মহিলা সাংবাদিকের পক্ষেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ত্রিপুরা প্রশাসনের কাছে সাংবাদিকদের হেনস্থার উপযুক্ত কৈফিয়ৎ তলব করে, এদিন তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআরের ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলার স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছেন– এফআইআর পরবর্তী কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবেনা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।

VoiceBharat News Tripura Journalist

গত নভেম্বর মাসেই ত্রিপুরায় খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া দুই মহিলা সাংবাদিক সমৃদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝা ত্রিপুরা পুলিশের দ্বারা চরম হেনস্থার শিকার হন। আইনজীবিদের আসার অপেক্ষা না করেই জোর করে তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, এবং আগরতলার একটি হোটেলের ঘরে নজরবন্দী করে রাখা হয়।

এই পরিস্থিতিতে দুই মহিলা সাংবাদিকের হয়ে তাদের সংবাদ সংস্থা ‘HW News Network’ ১৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় “ইচ্ছাকৃতভাবে সংবাদ মাধ্যমকে হেনস্থা করা হচ্ছে।” পাশাপাশি ‘এডিটর্স গিল্ড’-এর পক্ষ থেকেই সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি তোলা হয়।

সেই আবেদনের ভিত্তিতে আগেই তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি বিক্রম নাথের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘ইউএপিএ’ আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে কৈফিয়ৎ চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।

VoiceBharat News 350882 supreme court

এবার ত্রিপুরায় হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক হিংসা ও অপ্রীতিকর খবর ছড়ানোর সন্দেহে আটক মহিলা সাংবাদিকদের ওপর ফৌজদারি মামলা স্থগিত করে, সংবাদ সংস্থাকে হেনস্থার কৈফিয়ৎ তলব করল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

ঠিক কিসের ভিত্তিতে আটক ও অভিযোগ তোলা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে? কেনই বা সুপ্রিম কোর্টের এই আাদেশ? একনজরে দেখে নেওয়া যাক।

অক্টোবর মাসে দুর্গাপূজো চলাকালীন বাংলাদেশে মূর্তি ভাঙচুর ও দাঙ্গার আঁচ এসে পড়েছিল ত্রিপুরাতেও। ছড়িয়ে পড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের আক্রমণের ঘটনার খবর। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষজন। একের পর এক অগ্নিগর্ভ খবরে এবং ছবিতে ভরে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। তার মধ্যে বেশকিছু ভূয়ো ছবি ও খবর মিশে রয়েছে, ত্রিপুরা সরকারের এই দাবি সত্ত্বেও কেউ কেউ এই বক্তব্যের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

VoiceBharat News tripura 2 750x430 1
*সেই অশান্ত সময়ে সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিং তাঁর ট্যুইটে লিখেছিলেন,’Tripura is burning’. ত্রিপুরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সাম্প্রদায়িক হিংসার বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
* দুই আইনজীবি সহ ১০২ টি ট্যুইটার হ্যান্ডেলকে চিহ্নিত করে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল — যাঁরা সোশ্যাল মাধ্যমে ত্রিপুরার সংখ্যালঘু অত্যাচারের বিপক্ষে কথা বলেছিলেন।
*নভেম্বরে ত্রিপুরায় সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া দুই মহিলা সাংবাদিককে মঝপথেই আটকে দিয়ে সমৃদ্ধ সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝাকে ওই একই আইনে গ্রেপ্তার ও নজরবন্দী করা হয়।

ত্রিপুরার পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতিতে নভেম্বর মাসে সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপির মুখপাত্র নিত্যানন্দ রাই নিজেই বলেছেন,”এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে ত্রিপুরা সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ব্যাপকভাবে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছে।” প্রশ্ন ওঠে, কোন ধরনের ঘটনার কথা বলা হচ্ছে এবং কেনই বা ব্যাপক পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হলো? যেখানে ত্রিপুরার অশান্তির ঘটনাকে ‘গুজব’ আখ্যা দিয়ে বলা হচ্ছে ত্রিপুরায় নাকি কোনও বড় ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেইনি!

*নিত্যানন্দ রাইয়ের বক্তব্য, “ত্রিপুরা সরকার জানিয়েছে সম্পত্তি ক্ষতির কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।” প্রশ্ন উঠছে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

*উল্লেখ্য, ত্রিপুরায় অশান্তি চলাকালীন যেমন কিছু অগ্নিগর্ভ পুরোনো ছবি সম্বলিত ভূয়ো পোস্ট ছড়িয়েছে , তেমনই গেরুয়া পোশাকধারী একদঙ্গল লোকের হিংসায় উন্মত্ত উল্লাস এবং তান্ডব লীলার বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অনেকের দাবি, তার ফলেই কি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার অমন ক্ষিপ্ত হয়ে রাতারাতি সংবাদ সংগ্রাহক, আলোচক ও আইনজীবিদের ধরপাকড়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন? এই দুধরনের ঘটনাকে একাকার করে প্রকৃত সংবাদ সংগ্রাহকদের আটকানো কেন?

VoiceBharat News 121552205 121221647 tripuravhpprotestagainstbd4
যদি মেনে নেওয়াও যায়, কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী — বিক্ষিপ্ত অশান্তি যা কিনা কারোর দ্বারাই নিরূপণ যোগ্য নয়, অতএব কে কাকে ধরে! যদি মেনে নেওয়া যায়, এছাড়া আর কিছু ঘটেনি; মসজিদ ভাঙচুর বা ধর্ষণ ঘটেনি, তাহলে সংবাদ সংগ্রাহক, আইনজীবি ও মানবাধিকারের পক্ষে আলোচনাকারীদের কন্ঠরোধের প্রয়োজন হয় কেন?

এই প্রশ্নগুলোর সপক্ষেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিতের নির্দেশ ও প্রশাসনের কাছে উত্তর চেয়েছে শীর্ষ আদালত। এমনটাই সচেতন মানুষজন মনে করছেন।

By Partha Roy Chowdhury (কিঞ্জল রায়চৌধুরী)

Partha Roy Chowdhury (Bengali: কিঞ্জল রায়চৌধুরী) is staff journalist VoiceBharat News. email: kinjol@voicebharat.com