সাম্প্রতিক হিজাব ও বোরখা বিতর্কে প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন কিছু বলবেননা তা কীকরে হয়! পরীমনির গ্রেপ্তারি থেকে নুসরাতের সন্তান সর্বত্রই বিচরণ করে চলে লেখিকার সজাগ দৃষ্টিপাত। প্রতিবাদী মেয়েরা বিয়ে করলেই রেগে যান নারীবাদী লেখিকা।
তেমনই, শিক্ষার সাথে যে প্রতিবাদের দূরদূরান্তের সম্পর্ক নেই, কার্যত তাকে এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতেই তসলিমা নাসরিন লিখে জানান, মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটির প্রতিবাদী মেয়েটিকে তিনি সমর্থন করছেন তবে বোরখার জন্য নয়, মেয়েটির ‘শিক্ষার’ জন্য! তসলিমা নাসরিন ট্যুইটে লিখেছেন, “যে ছাত্রী মাথা উঁচু করে হাঁটলো, তার স্মার্টনেস ও সাহসিকতা অসাধারণ সুন্দর লাগলো। কিন্তু তার অসাধারণ সৌন্দর্যের কারণ তার শিক্ষা, তার বোরখা নয়।”
হ্যাঁ, যে মেয়েটি কলেজে পড়তে আসছে সে যে লেখাপড়া জানে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু একদল উন্মত্ত ছেলের হিংসাত্মক প্রলাপের ভঙ্গিমায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির পাল্টা আক্রোশে ‘আল্লাহু আকবর’ বলার জন্য শিক্ষার অবদানটা কোথায় সেটাই অনেকের কাছে ঠিক পরিষ্কার নয়। সাহসিকতা আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রতিবাদে শিক্ষার ভূমিকাটা লেখিকা কোথায় পেলেন, সেটাই প্রশ্ন। নাকি বোরখা প্রসঙ্গ এড়াতেই সুকৌশলে বাক্যবিস্তার! এমন ভাবলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কেননা, অতীতে এই লেখিকাই বলেছিলেন, “বোরখা অপরাধীদের পোশাক।” এক্ষেত্রে তাই বোরখা সমর্থনের কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। ঠিক সেকারনেই কি “জয় শ্রীরাম” নিয়ে একটা কথাও উচ্চারণ করেননি লেখিকা? কারণ বুদ্ধিজীবিদের একাংশ মনে করেন, তসলিমা নাসরিনের ‘মুসলিম মৌলবাদের’ বিরোধিতার পেছনে ‘হিন্দু মৌলবাদীদের’ প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ট্যুইট করার পাশাপাশি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনও লিখেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যেখানে তিনি বলছেন, “বোরখা পরায় যখন বাধা আসে তখন আমি বোরখা পরার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াই। আবার বোরখা যখন মেয়েদের শরীরে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন এটি খুলে ফেলার স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াই।”
কিন্তু ঘটনা হল বাস্তবে তসলিমা নাসরিন ঠিক এর উল্টো মনোভঙ্গী দেখিয়েছিলেন, যেকারণে সঙ্গীতশিল্পী এ.আর রহমান এবং তাঁর মেয়ে খাতিজা রহমানের সাথে লেখিকার বিরোধ চরম পর্যায়ে ওঠে।
এ.আর.রহমানের কন্যা খাতিজা রহমানকে একটি গ্রুপ ছবিতে বোরখা (হিজাব-নিকাব সমেত) পরা অবস্থায় দেখে তসলিমা সোশ্যাল মাধ্যমে লিখেছিলেন, “এ.আর.রহমানের সঙ্গীত আমি খুবই পছন্দ করি। কিন্তু যখনই আমি তাঁর কন্যাকে দেখি আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। একটি সংস্কৃতিবান শিক্ষিত পরিবারের নারীও যে এরকম মগজধোলাইয়ের (brainwash) শিকার হতে পারে, এটা খুবই বেদনাদায়ক।” এর উত্তরটি সোশ্যাল মাধ্যমেই সপাটে দিয়েছিলেন খাতিজা রহমান।
খাতিজা বলেছিলেন, “তসলিমা নাসরিনের যদি এতই দমবন্ধ লাগে, তাঁর উচিত বাইরে গিয়ে বাতাস নেওয়া।” এমনকি জবাব দিয়েছিলেন এ.আর.রহমানও। একটি ছবিতে পাশাপাশি দুই মেয়ে খাতিজা ও রাহিমা, একজন হিজাব-নিকাব পরিহিতা অন্যজন সম্পূর্ণ মুক্ত — ক্যাপশনে এ.আর.রহমান লিখেছিলেন “পোশাক বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা সবার আছে।”
এর উত্তরে তসলিমা কী বলেছিলেন জানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক বিতর্কে তিনি যে সযত্নে ধর্মীয় উক্তির প্রসঙ্গটি এড়িয়েছেন সেটা অনেকেরই চোখে পড়েছে। তার স্পষ্ট কারণ হলো, ওইদিন ওইসময়ে কর্ণাটকের কলেজটিতে একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী তরুণের অশালীন ভঙ্গিতে উন্মাদনার জবাবে একটি মুসলিম মেয়ে তার ধর্মীয় অধিকারের রক্ষার্থেই ‘আল্লাহু আকবর’ চিৎকার করেছিল। বুঝিয়েছিল এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। আর যদি সেদিন ঘটনাচক্রে মাণ্ড্য কলেজে দাঙ্গা বেধে যেত, তবে সরাসরি দায়ী থাকত ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিই! ভিডিওটি যারা দেখেছেন, এই কথাটিই তাঁরা জোরের সাথে বলছেন।