১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি প্রেমের জন্য উৎসর্গীকৃত বিশেষদিন বলেই খ্যাত। যে প্রেম যুদ্ধের মন্ত্রণার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। অথচ তিনবছর আগের এই এই দিনটিতেই ভারতে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া, ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্কের আবহ। যেদিন পুলওয়ামায় পাকিস্তানি মদতপুষ্ট হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪০ জওয়ান। তাজা স্মৃতিনির্ভর এই দিনটির যন্ত্রনা এখনও সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়নি। ৪০ জওয়ানের পরিবারের, তাঁদের স্ত্রী-সন্তানের, ছেলেমেয়ে অথবা ভাইবোনের রক্তস্নাত শোকে জমাট বেঁধে এই দিনটি হয়ে উঠেছিল ‘ব্ল্যাক ডে’। ভ্যালেনটাইন’স ডে-র উদযাপনের রোম্যান্টিকতায় পুরোপুরি ভেসে যাওয়ার আগে, ভারতীয় হিসেবে ভারতের জন্য প্রাণ বিসর্জিত হওয়া ৪০ টি সেনাপরিবারের জন্য অন্তত কিছুটা আবেগ রাখার আবেদন করছে ভারতের দেশপ্রেম।
এখনও ফিকে হয়নি সেই মর্মন্তুদ স্মৃতি। কেমন করে ঘটানো হয়েছিল সেই নাশকতামূলক হামলা? ভাবলে এখনও শিউরে ওঠে ভালোবাসার মনগুলো। ২০১৯ সালের এই ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৭৮ টি গাড়িতে ২৫০০ সেনাজওয়ান নিয়ে কনভয় রওনা দিয়েছিল ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে। জম্মু থেকে শ্রীনগরগামী এই কনভয়ে আচমকাই ঢুকে পড়েছিল একটি বিস্ফোরক বোঝাই বাস। মূহুর্তের বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ে সেনা কনভয়। আগুন জ্বলা কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় নিষ্পাপ হাওয়া আর আলো! ৪০ টি তরতাজা প্রাণ নিশ্চিহ্ন মূহুর্তেই!
পূর্বপরিকল্পিত এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন ‘জইশ-এ-মহম্মদ’। আর এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল সংগঠনের জঙ্গি ২২ বছর বয়সী আদিল দার।
ভারতও জবাব দিতে ছাড়েনি। আর্থিক ও সামরিক ক্ষেত্রে দিয়েছিল পাল্টা জবাব। পাকিস্তানের বালাকোটে অবস্থিত জঙ্গি শিবির বম্বিংয়ে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় বায়ুসেনা।
প্রত্যাঘাতও ফিরে আসে তেমনই। ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে আটক করে নেয় পাকিস্তানি সেনা। যদিও শেষমেশ ভারতের কাছে নতিস্বীকার করে জওয়ান অভিনন্দনকে হস্তান্তরিত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তবু দাগ রয়ে যায়। পুলওয়ামার বিধ্বংসী চিহ্ন বুকে ৪০ সেনাজওয়ানের উদ্দেশে অর্ধনমিত হয় পতাকা। আজ ‘ব্ল্যাক ডে।’ ভারতীয় সেনাজওয়ানের পরিবারের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাদের স্মরণ করবার দিন।