কিছু রোগ শরীরে আসে জন্মগতভাবে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যস্তজীবনের নানান অসঙ্গতি অসুখবিসুখ ডেকে আনে। অল্প দৌড়ঝাঁপে ক্লান্তি! জৌলুস হারিয়ে ফেলছে ত্বক! চুল পড়া বন্ধ হচ্ছেনা! চেষ্টা করেও ওজন রাখতে পারছেননা নিয়ন্ত্রণে! আপাতদৃষ্টিতে এগুলি সাধারণ উপসর্গ মনে হলেও এর পিছনে থাইরয়েডের প্রভাব কাজ করতে পারে। বড়সড় বিপদের আগেই সময়মতো এর চিকিৎসা দরকার। আবার অনেকসময় চিকিৎসা করালেও ওষুধে কাজ দিচ্ছেনা। কী করবেন সেক্ষেত্রে? হতাশ হবার কিছু নেই।
সাধারণত থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চালানো হয়। সুতরাং ধৈর্য রাখতে হবে। আর একটু মনোযোগ দিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে চললেই অনায়াসে থাইরয়েডকে কাবু করা সম্ভব। থাইরয়েড কী?
থাইরয়েড একধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি যা গলার কাছে শ্বাসনালীর সম্মুখভাগে থাকে। এই গ্রন্থি থেকে T3 ও T4 দুধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়, যে হরমোনের পরিমান রক্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী থাকে। আর এর ভারসাম্যের হেরফের থেকেই থাইরয়েডের সমস্যার সূত্রপাত।
থাইরয়েডের সমস্যা ২ প্রকার। ১) হাইপারথাইরয়েডিজম — এক্ষেত্রে ক্ষরিত হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। ২) হাইপোথাইরডিজম –ঠিক উল্টো। এক্ষেত্রে ক্ষরিত হরমোনের মাত্রা কমে যায়।
থাইরয়েডের সমস্যা নির্ধারণের কয়েকটি পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। আল্ট্রা সাউন্ড, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি ইত্যাদি টেস্টের মাধ্যমে সমস্যার প্রকার ও গুরুত্ব অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আর ঠিক এখানেই যে বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার, তা হলো ওষুধ খাওয়ার নিয়ম। থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমত, সকালে খালি পেটে খেলে থাইরয়েডের ওষুধ বিশেষ কার্যকরী হয়। অথবা রাতে ঘুমানোর আগে। চিকিৎসকদের মতে সারাদিনে খাওয়ার আগে বা পরে খেলে শরীরে সঠিক পরিমাণে তা শোষিত হয়না। সুতরাং খালিপেটে ও রাতে বিছানায় যাবার আগে (১নম্বর উপসর্গের ক্ষেত্রে) থাইরক্সিনের একটি ডোজকে দুটি ভাগে নিলে ভালো হয়। এছাড়াও প্রতিদিনের ওষুধ খাবার সময়টি যেন নির্দিষ্ট থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
ওষুধ খাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে কিছু খাওয়া উচিত নয়, চা কিংবা কফিও পান না করলেই ভালো। থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার পর ৩ ঘন্টা পর্যন্ত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করবেননা। আপনি যদি নিয়মিত থাইরয়েডের ওষুধ খান, তবে আয়রন – ক্যালসিয়াম অথবা ভিটামিনযুক্ত সাপ্লিমেন্টারি খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। অবশেষে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা, অনেকক্ষেত্রেই থাইরয়েডের ওষুধ সারা জীবনই খেয়ে চলতে হবে। এমনকি রক্তে নির্দিষ্ট হরমোনের মাত্রা ভারসাম্যে ফিরে এলেও ওষুধ কোনোমতেই বন্ধ করা চলবেনা। ওষুধের ডোজ হেরফের করতে হতে পারে, সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করাই ভালো।