পৃথিবীর আদিমতম জীবিকা যৌনপেশা নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। সামাজিক কর্মীদের একাংশের মতে এই পেশা নৈতিকভাবে অন্যায়। আবার অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন এই যৌনপেশা সামাজিক জীবনে যৌন ব্যভিচার রোধের সহায়ক। এই নিয়ে চলতি বিতর্কের আবহেই এক অসামান্য সিদ্ধান্ত জানালো সুপ্রিম কোর্ট।
যৌনপেশা সম্পর্কে আইনের এই রায়কে যুগান্তকারী মনে করা হচ্ছে। তবে রায়ের ঘোষণা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। সম্প্রতি বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের অধীনে ৩ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চে রায়ে বলা হয়েছে, যাঁরা স্বেচ্ছায় যৌনপেশা বেছে নিয়েছেন তাঁদের কাউকে কোনোরকম হেনস্থা, গ্রেপ্তার বা জরিমানা করা যাবেনা। এমনকি যৌনপল্লীতে পুলিশ কর্মীদের হানা দিয়ে যৌনকর্মীদের হেনস্থা করা যাবেনা বলে রায় দিয়েছেন বিচারপতিরা।
যৌনকর্মীদের পেশায় পুলিশি হস্তক্ষেপ বা ফৌজদারি মামলা করতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, রায় অনুযায়ী ‘স্বেচ্ছায় যৌনপেশায় থাকা বেআইনি নয়, যৌনপল্লি চালানো বেআইনি এবং আইনের চোখে অপরাধ।’ সেক্ষেত্রে যৌনকর্মীর বয়স এবং সম্মতির ব্যাপারটি বিবেচনা করে ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করতে হবে। যদি যৌনকর্মী সাবালক হন এবং নিজের স্বেচ্ছায় সম্মতি দিয়ে থাকেন, তখন পুলিশ কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সাফ বলা হয়েছে, যৌনপেশা একটি পেশা এবং যৌনকর্মীদের সম্মান এবং আইনের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার সম্পূর্ণতা রয়েছে। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং অন্যান্য বিচারপতিরা এবিষয়ে সহমত পোষণ করে রায় দিয়েছেন।
যৌনকর্মীদের প্রতি পুলিশের নিচু দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, কোনও যৌনকর্মী যৌনহেনস্থার অভিযোগ করলে সেক্ষেত্রে আইন মেনে সত্বর পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘আর্টিকল ২১’-এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে শুধুমাত্র এই পেশাই নয়, ভারতের সব নাগরিক সম্মানীয় জীবন পাওয়ার অধিকারী।
সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যৌনকর্মীর ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করা চলবেনা। কোথাও পুলিশি হানায় যৌনকর্মী ধরা পড়লে বিচারক খতিয়ে দেখবেন ঘটনায় যৌনকর্মীর সম্মতি ছিল কিনা। যদি সম্মতি থাকে, তাহলে আইন তাকে নিষ্কৃতি দেবে। এই রায়ের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত চেয়ে আগামী ২৭ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঘোষণা করেছে আদালত।