VoiceBharat News IMG 20220113 151501

জাতীয়তাবাদী বীর ভারতীয় সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের ১৬০ তম জন্মজয়ন্তী পূরণ হল এই বছর। স্বামীজির মাত্র ৩৯ বছরের জীবদ্দশায় বহুবিধ ঘটনার মধ্যে যেটি সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়, তা হলো ‘শিকাগোর ধর্মমহাসভা।’ যেখানে বিদেশের মাটিতে ভারতীয় তথা ‘হিন্দুধর্মের’ প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন স্বামীজি। ধর্মের উপস্থাপনাই যখন স্বামী বিবেকানন্দের মূল বিষয় ছিল, এবং এই চলমান সময়েও হিন্দুধর্ম ও অন্যধর্ম বিশেষত ইসলাম নিয়ে এত সংঘাতময় ছবি দৃশ্যত ফুটে উঠছে, তখন স্বামী বিবেকানন্দ ‘ইসলাম’ ধর্মকে কী চোখে দেখতেন সে প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে।

VoiceBharat News images 2022 01 13T151648.307


প্রথমেই উল্লেখ্য, গেরুয়া রঙ সন্ন্যাস ও ত্যাগের প্রতীকী হওয়ায়, ‘গেরুয়াধারী’ মানেই ইসলাম বিরোধী এমন একটা ধারণা প্রচলিত আছে। যেটা শুধু এইসময়ে নয়, সেই সময়ে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটিতেই প্রথম প্রতিফলিত হয়। স্বামীজিও সন্ন্যাসী হিসেবে জাতীয়তাবাদী ধারণাকে প্রাধান্য দিতেন বলেই তাঁকেও অনেকে ‘ইসলামবিরোধী’ মনে করে থাকেন। তবে এই ধারণা যে ভ্রান্ত, সেটা অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু তাঁর একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন , “স্বামীজির লেখায় বা কথায় ইসলাম প্রসঙ্গ মোটেই কম নয়। কিন্তু স্বামীজি মসীজীবি (লেখক) ছিলেননা বলে যেকোনো বিষয়ে রাশি রাশি লেখার প্রয়োজন অনুভব করতেননা। সেকালের হিন্দুদের মুসলমান-ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ ছিলনা বলে, তারা স্বামীজির সেসব কথা লিখে রাখার উৎসাহ দেখাননি।”

VoiceBharat News IMG 20220113 151619
কমবেশি সকলেই জানেন, স্বামী বিবেকানন্দের ‘অমর ভারত আমার ভারত’ ও আরো কয়েকটি বই ছাড়া বাকি সমস্ত রচনাই তাঁর বক্তব্যের নোট নিয়ে অন্যের দ্বারা সংকলিত। শঙ্করীপ্রসাদ বসু সেই উল্লেখই করতে চেয়েছেন। সেইসব নোট কিংবা পাশ্চাত্যের অন্যান্য প্রসঙ্গ বা চিঠি থেকে যতটা ধারণা করা যায়, তাতে সুস্পষ্ট — ইসলাম ধর্ম ও হজরত মহম্মদ সম্পর্কে স্বামীজি যথেষ্ট উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন।

আমেরিকায় থাকাকালীন তাঁর বক্তৃতার একটি সংকলনের, ‘বাংলায় হজরত মহম্মদ’ শীর্ষক রচনা অনুযায়ী, “শুরুতেই স্বামীজি বলেছেন সৎ ও প্রিয়দর্শন যুবক হজরত মোহাম্মদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিত্তবান বিধবা খাদিজা তাঁকে বিবাহ করেন। প্রভূত অর্থের অধিকারী হয়ে তিনি রোম-পারস্যে আধিপত্য বিস্তার করেন। পাপাচরণ, পৌত্তলিকতা, উপাসনার নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কার, নরবলি প্রভৃতি দেখে ব্যথিতচিত্তে তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেন।”

VoiceBharat News BIBAKANANDA 1912220601

অর্থাৎ পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কার বিরোধী হিসেবে ইসলাম স্বামীজিকে আকৃষ্ট করেছিল। আরেক আলোচনায় তিনি বলেছেন, “মুসলমান ধর্মে যথেষ্ট ভালো দিক আছে। মহম্মদ সাম্যবাদের আচার্য। তিনি মানবজাতির ভ্রাতৃভাব, সকল মুসলমানের ভ্রাতৃভাবের প্রচারক, এক ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষ।” বিতর্ক যাই থাক, ইসলামের ঐক্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন স্বামীজি।

জওহরলাল নেহেরু তাঁর ‘The Discovery of India’ নামক বইয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের একটি চিঠির উল্লেখ করেছেন, যে চিঠি আলমোড়া থেকে তাঁর এক মুসলিম বন্ধুকে লেখা। চিঠির বয়ান অনুসারে স্বামীজি বলছেন, “আমি আমার মনের চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সমগ্র ভারতের ভবিষ্যত, যার মন বেদান্ত আর দেহ ইসলাম!” এই চিঠিটি ১৮৯৮ সালের ১০ জুন লেখা হয়েছিল বলে নেহেরু জানান।

অনেকটা এই বক্তব্যের অনুসরণেই কি পরবর্তী সময়ে নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, “একই বৃন্তে দুটি কুসুম — হিন্দু মুসলমান!” প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই রেখাপাত করে যায়। ঘটনাচক্রে যদিও স্বামীজির মনশ্চক্ষে দেখা চিত্রকল্প পুরোপুরি সত্যরূপে বাস্তবায়িত হয়নি, এর কারণ আমরা গালিবের জীবনী হাতড়ালে হয়তো পেলেও পেতে পারি। তবে হিন্দু ধর্মের মূল সুরের সাথে যে ইসলামের আদপে কোনও বিরোধ ছিলনা, স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনাতেও তাই প্রতিফলিত হয়েছে।

By Partha Roy Chowdhury (কিঞ্জল রায়চৌধুরী)

Partha Roy Chowdhury (Bengali: কিঞ্জল রায়চৌধুরী) is staff journalist VoiceBharat News. email: kinjol@voicebharat.com