রাশিয়ার মতো শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রের যুদ্ধ ঘোষণা। তার সামনে নির্ভয়ে বুক পেতে দাঁড়ালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট , নিজের দেশকে কোনোমতেই সাম্রাজ্যবাদের কবলে পড়তে দেবেননা পণ করে গড়ে তুললেন প্রতিরোধ। প্রকাশ্যেই হুঙ্কার দিলেন –“রাশিয়ার টার্গেট আমি ও আমার পরিবার।” জাতীয় মর্যাদা রক্ষার্থে এমন দৃঢ় পদক্ষেপেই সম্প্রতি বিশ্ববাসীর মন কেড়ে নিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। পর্দার হিরো থেকে রিয়্যাল হিরো হয়ে উঠলেন যিনি, আপনারা জানেন কি তাঁর আসল পরিচয়?
পর্দার জগতের এক অসাধারণ কমেডিয়ান হিরো হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইহুদি বংশোদ্ভুত জেলেনস্কি আইনের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনের পর আশ্চর্যভাবে আইনি পেশায় না গিয়ে তিনি অভিনয়ের দিকে চলে যান। অভিনয়টা অবশ্য নেশার মতো তাঁর রক্তেই মিশে ছিল। ছাত্র থাকাকালীনই কৌতুক অভিনয়ের প্রতি টান। ২০০৮ সালে ‘লভ ইন দ্য বিগ সিটি’ সিনেমায় দর্শকদের প্রভূত প্রশংসা পান।
এছাড়াও রাশিয়ান ভাষার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি সাফল্যের সাথে অভিনয় করেছেন। তবে তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল ‘– টিভি শোয়ের মাধ্যমে। যেটা মূলত ছিল রাজনীতির কৌতুক নকশা। এই শোয়ের মধ্যেই ইউক্রেন দেশ তার সত্যিকারের নেতাকে আবিস্কার করে। ২০১৪ সালে তিনি বাস্তবেই রাজনীতিতে আসেন, এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকভিচকে পরাজিত করে পরবর্তী বছরই ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন।
খানিকটা আমাদের ভারতীয় রাজনীতিক ভগবন্ত মানের সাথে অনেকে তাঁর সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। কেউ তুলনা করছেন প্রাক্তন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগনের সাথে। কেননা এঁরাও অভিনয় থেকে রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন। তবে জেলেনস্কির মতো একলা যোদ্ধা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেইজন্যেই সম্প্রতি তিনি আলোচনার শিরোনামে।
রাশিয়ার ‘ডন -বাস রিজিওন’ দখলের হয়তো একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছেই। তবে জেলেনস্কির মতো এমন অকুতোভয় উচ্চারণ! প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও মাটি আঁকড়ে থাকা! সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বীর দর্পে দেশের বিপদকে এককথায় ‘আমার বিপদ’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলেন যিনি, সেই জেলেনস্কি, বর্তমানে তিনি আর পর্দার নায়ক নয়, বিশ্ববাসীর চোখে সত্যিকারের নায়ক হয়ে উঠেছেন।