দেশনেতা হোক বা রাষ্ট্রনেতা, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেও নেতা সাধারণ সেফ সাইডে থাকেন, যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু রাষ্ট্রনীতিতে এটাই দস্তুর। যুদ্ধ পরিস্থিতি লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, রাষ্ট্রনেতা নয়, সৈনিকরাই আগে বুক পেতে দাঁড়ান শত্রুপক্ষের গুলির সামনে। এটাই যেখানে দস্তুর, সেইসময়ে দাবাখেলার বোড়ের চাল ওলটপালট করে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন ইউক্রেনবাসী কলকাতার ডাক্তার পৃথ্বীরাজ ঘোষ।
৩৭ বছর বয়সী বাঙালি ডাক্তার শত সুযোগ পেয়েও দেশে ফিরতে রাজি হননি। কিন্তু কেন? যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে সবাই যখন দেশে ফিরতে মরিয়া, তখন ডাক্তার পৃথ্বীরাজ কেন জেদ ধরে ইউক্রেনের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন?
ছাত্রছাত্রীদের জন্য। হ্যাঁ পৃথ্বীরাজ ঘোষ জানিয়েছেন, সমস্ত ছাত্রছাত্রী নিরাপদে দেশে না ফেরা পর্যন্ত ইউক্রেন ছাড়বেননা তিনি। এর মধ্যে সাড়ে ৩০০ ডাক্তারি পড়ুয়াকে তিনি ভারতে পাঠাতে উদ্যোগ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫০ জন ভারতীয় এবং ৫০ জন বাঙালি। এরা সবাই তাঁর ছাত্রছাত্রী।
কিন্তু বহুসংখ্যক পড়ুয়া এখনও ইউক্রেনে আটকে। যাঁরা পৃথ্বীরাজের ছাত্র নন ঠিকই, তবে মেডিকেলের ছাত্র তো? তাঁদেরও নিজের ছাত্রছাত্রীদের সমতুল্য গুরুত্ব দিয়ে দেশে ফেরাতে তৎপর এই যুবক ডাক্তার পৃথ্বীরাজ ঘোষ। আর এখানেই তিনি প্রকৃত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছেন, শিক্ষক হিসেবে নিজেই এক জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়েছেন,” সকল ছাত্রছাত্রী দেশে না ফেরা পর্যন্ত আমি কিছুতেই ইউক্রেন ছেড়ে যাবনা।”
কিন্তু কলকাতায় তাঁরও তো পরিবার রয়েছে! কী বলছেন পরিবারের লোকজন? কলকাতায় রয়েছেন পৃথ্বীরাজ ঘোষের বৃদ্ধা বাবা-মা।
ডাক্তারের বাবা প্রদীপ ঘোষ জানান, “আমাদের চিন্তা করাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ও জানে ওর কী দায়িত্ব।” মা বাবা দুজনেরই বক্তব্য, “ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। দেখবেন ওর কোনও ক্ষতি হবেনা।”
দেশের এক বাঙালি ডাক্তার, সর্বোপরি এতবড় একজন মানুষের ক্ষতি হবেনা, সকলেই এই কামনা করছেন। পাশাপাশি নির্ভীক চিকিৎসক ও অধ্যাপক পৃথ্বীরাজ ঘোষ বলেছেন, “আমি বাঙালি। বাঙালি কখনও কাপুরুষ নয়। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাই জীবনের যত ঝুঁকিই থাকুক না কেন, আমার সব ছাত্রছাত্রীদের না নিয়ে দেশে ফিরবনা।”
এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল।