প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলার ট্যাবলো বাতিলের পর থেকেই বারুদ জমেছিল। এবার নেতাজির জন্মতিথিতে মাল্যদানপর্ব সেরেই কেন্দ্রের প্রতি বিস্ফোরণে ফেটে পড়লেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ট্যাবলো নিয়ে বিভিন্ন জনের সমালোচনা চলাকালীনই ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির ২৮ ফুট উঁচু গ্রানাইটের মূর্তি স্থাপনের ঘোষণা করে দেন প্রধানমন্ত্রী। এই ঘোষণাকে কার্যত মুখরক্ষা বলেই উল্লেখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। নেতাজির জন্মদিবসে সেই কটাক্ষই আরো জোরালোভাবে প্রকাশ করলেন মমতা।
জন্মদিনের ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “একটা স্ট্যাচু করে দিলেই নেতাজিকে ভালোবাসা যায়না, দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। অনেক তো স্ট্যাচু করেছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশের ইতিহাসটা কি পড়েছেন?”
প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাস অজ্ঞতার দিকে কটাক্ষ করেই মমতা স্মরণ করিয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সহ অগনিত বাঙালির অবদান। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, “আজও নেতাজির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেননা। স্ট্যাচুতে লিখেছেন জন্মদিন, মৃত্যুদিন লিখতে পারবেন তো? আমরা কেউ পারবনা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও একটা রহস্য উদ্ঘাটন করা গেলনা! মূর্তি দিয়ে সবকিছু হয়না। নেতাজিকে আত্মস্থ করতে হয়, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়।”
নেতাজির মৃত্যুদিন না থাকার উল্লেখ করে একই সঙ্গে তাঁর অমরত্ব এবং মৃত্যুরহস্য তদন্তের দাবি তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যসরকার এই ব্যাপারে যতটা সম্ভব দায়িত্ব পালন করেছে, নথিপত্র ‘ডিজিটালাইজ’ করেছে– জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলার ট্যাবলোর কথা তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও, রাজ্য নেতাজিকে প্রাপ্য সম্মান জানিয়ে কলকাতায় ট্যাবলো বের করবে, একথা জোরের সাথে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির জাতীয় আবেগ সম্পর্কে বলেন , “আজ বাংলাকে এত অবজ্ঞা! সবটাই তো বাংলাকে ঘিরে। বাংলার ইতিহাস মুছে দেবার ক্ষমতা কারুর নেই। ভারতের ইতিহাস মুছে দেবার ক্ষমতা কারুর নেই। আজ স্ট্যাচু করেছেন তো আমাদের চাপে পড়ে! এতদিন তো মনে হয়নি!
কিন্তু স্ট্যাচু করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। নেতাজিকে পড়ুন। দেশের ইতিহাস পড়ুন। দেশকে ভালোবাসুন। দেশকে ভালোবাসলে কখনও গৃহবিবাদ হয়না। দেশকে ভালোবাসলে কখনও হিন্দু-মুসলমান করতেননা।”
এভাবেই আরো একবার নেতাজির তথা ভারতের মূল দর্শন ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি সম্পর্কে কেন্দ্রকে সচেতন বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।