ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে নেতাজির প্রাসঙ্গিকতা তুলনা করে বাংলার ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে তরজা চলছে রাজ্য ও কেন্দ্রের। তর্কের সূত্রপাত প্রজাতন্ত্র দিবসে পশ্চিমবঙ্গের ‘নেতাজি’ ট্যাবলো বাদ যাওয়ার পর থেকেই। এমনকি ইন্ডিয়া গেটে মূর্তি স্থাপনের মধ্যেও রাজনৈতিক মুখরক্ষার প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে বিদ্ধ করে চলেছে রাজ্যসরকার ও বাংলার বিদগ্ধ মানুষজন। তার ওপর পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তাঁর আলটপকা মন্তব্যে আগুনে আরো বেশি ঘি ঢালার ফলে তীব্র হয়েছে সমালোচনার ‘শিখা’। তবে এরই মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অর্থ বোঝাবার চেষ্টা করেছেন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।
শমীক ভট্টাচার্য প্রথমেই এমন একটি তথ্য দিয়েছেন, যেটা আক্ষরিক অর্থে স্মার্ট উত্তর। তিনি বলেছেন, “নেতাজি শুধু বাঙালির নয়, সারা দেশের। তাঁকে জোর করে বাঙালি প্রমাণ করতে বিরোধীরা নোংরা রাজনীতি করছে।”
এর সপক্ষে তথ্য দিয়ে তিনি জানান, “বাংলার ভোটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হননি। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের ভোটে।” কথাটা তথসমৃদ্ধ হলেও পাল্টা অনেকের প্রশ্ন, একজন বাঙালি বাংলার বাইরে তাঁর কৃতিত্বের সাক্ষর রাখলে তিনি পাঞ্জাবি বা মারাঠি প্রমাণিত হন? নাকি সেটা একজন বাঙালির সাফল্য হিসেবেই গণ্য হয়?
এরপর শমীকবাবুর অকাট্য যুক্তি, “কংগ্রেস স্বাধীনতা ও তার পরবর্তীকালে নেতাজির ইতিহাস ভোলাবার চেষ্টা করেছে।” কথাটা আক্ষরিকভাবে সত্যি, তবে “কংগ্রেসের ঐতিহ্য নিয়ে গঠিত তৃণমূল” বলে যে ইঙ্গিত তিনি করেছেন, এটা মস্তবড় ভুল বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হলেও, কংগ্রেসের ভাবধারা ও আচরণের সাথে এই দলের সাদৃশ্য নেই। উল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাংশে বামপন্থীরা বামপন্থার লক্ষণ পর্যন্ত দেখতে পান। ঠিক যেভাবে একজন দক্ষিণ পন্থী নেতা হয়েও সুভাষচন্দ্র বসু ‘সোশ্যালিস্ট’ মনোভাবাপন্ন ছিলেন!
শমীকবাবু এব্যাপারে ‘সিপিআইএম’ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য রাখেননি, যেটা এই আলোচনায় সর্বপ্রথমে আসা দরকার ছিল বলেই সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন। আর তাই বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের এই তুলনা নিছকই নিজের দলের ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা বলেই মনে হয়েছে।
তবু শমীক ভট্টাচার্যের এটাই প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজির জন্মদিন পালনের এত ভালো উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও বিরোধীরা বিতর্ক তুলছেন কেন? এর উত্তর কিংবা প্রতিপ্রশ্ন যারা রাখবেন তাঁদের আগে রাজনৈতিক পোশাক গা থেকে খুলে ফেলতে হবে, সচেতন মহলের একাংশ এমনটাই মনে করছেন।