‘রাধার কী হইল অন্তরে ব্যথা,
বসিয়া বিরলে, থাকয়ে একলে
না শুনে কাহারো কথা..’
পদাবলির এই লাইনগুলিই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে ২১ বছরের মেয়েটির জীবনে। প্রথম দৃষ্টিপাতে তাঁকে দেখে রাধিকাই মনে হবে দর্শকদের। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আপনি হয়তো ভাববেন কোন ভঙ্গিমায় বন্দনা করবেন তাঁকে! প্রেমপর্যায়ে! নাকি পূজা পর্যায়ে! তিনি জয়া কিশোরী।
নামটি যাঁরা চেনেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জয়াজি-র ফলোয়ার। তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো প্রেমিক দৃষ্টিতেও দেখেছেন মনে মনে, গান শুনেছেন বিভোর হয়ে! সাত সকালে জয়ার ছবির সাথে কবিতা লিখে পোস্ট করেছেন ফ্যান পেজে! কিন্তু তাঁরা এটাও নিশ্চিত জানেন, জয়া কিশোরীর পথ আলাদা। সেই পথ ঐশ্বরীয়। ঈশ্বর প্রভু প্রেমিক মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণই জয়ার ধ্যানজ্ঞান! সেখানেই তিনি সমর্পিত। আর যাঁরা জয়া কিশোরীকে চেনেননা, তাঁদের জন্য রইল কিছু বিস্ময়কর তথ্য।
রাজস্থানের সুজানগড়ের অভিজাত পরিবারের মেয়ে। লাবণ্যময়ী রূপসী। বি.কম পড়ছেন। ভজন গায়িকা। ইউটিউব থেকে ফেসবুক সর্বত্র জনপ্রিয়। একাধিক পেজ তৈরি হয়েছে তাঁকে নিয়ে। তবু মূল লক্ষ্য সন্ন্যাস। যেবয়সে একটি সাধারণ সুশ্রী মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি-কেরিয়ার-বিয়ে ধাপে ধাপে এসব নিয়েই ভাবে, সেখানে এই বয়সেই সাধ্বীর পথ বেছে নিয়েছেন জয়া কিশোরী। কিন্তু কারণটা কী?
এ প্রশ্ন হাজারো, লাখো ফ্যান ফলোয়ার ও সাধারণ মানুষের মনের প্রশ্ন। উত্তরে জয়া জানিয়েছেন, কিছু একটা অপার্থিব ক্ষমতা নিজের মধ্যে টের পেতেন। ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষণ ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ক্রমে বড় হওয়ার পথে মনে হতে লাগল এ নিছক আকর্ষণ নয়, আধ্যাত্মিকতার সাথে আত্মিক সংযোগ। এটা বুঝেই প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার সাথে সাথেই সন্ন্যাস বেছে নেন তিনি।
ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক পথে এ দৃষ্টান্ত আগেও দেখা গিয়েছে। অভিজাত বংশের সুশিক্ষিত যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্তের স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা এর সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রমাণ। সিস্টার নিবেদিতার কথাও কারো কারো মনে আসতে পারে। জয়া কিশোরী অনেকটা তাঁদেরই অনুসারী। তবে আজকের সময়ে এই ঘটনা সম্পূর্ণ বিরল, ব্যতিক্রম। সবচাইতে বড় কথা হল, জীবনে অন্য কোনোকিছুই করতে না চেয়েও ভারতের অগনিত মানুষের কাছে তিনি বিখ্যাত! শিশুদের প্রতি জয়ার ভালোবাসা অপরিসীম। মা না হয়েও মা হয়ে উঠেছেন তিনি। জয়ার ভাগবত পাঠ ও ভজন শোনার জন্য
হারিয়ানা, আনাজমান্ডি, পানিপথের শ্রোতা-দর্শক মুখিয়ে থাকেন! জয়া কিন্তু লেখাপড়া ছাড়েননি। বরং তাঁর মতে, ‘শিক্ষা এমনই সম্পদ, যা ভাগ করে দিলেও ফুরোয়না।’ জয়ার কাছে শিক্ষা মানে জ্ঞান। আর জ্ঞানই মানুষকে প্রকৃত উন্নত করে তোলে। এটাই তিনি বিশ্বাস করেন। তাই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। লক্ষ্য– সাধ্বী হয়েই সারাজীবন মুরলীধরের আরাধনা!
এ যেন সাক্ষাৎ ‘দ্বাপর’ যুগের মথুরা, বৃন্দাবনের টাইম জার্নি! এছাড়া আর কী ব্যাখ্যা করা যায়?