উত্তরপ্রদেশ এবং আরো চার রাজ্যে নির্বাচন আসন্ন প্রায়। ঠিক তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকানো নিয়ে যে পরিমাণ হইচই শুরু করল বিজেপি এবং আরএসএস, এটাকে অতিরকম বাড়াবাড়ি বলেই মনে করছে পাঞ্জাব সরকার ও জনগণের একাংশ।
৩ কৃষি আইন বাতিল ঘোষণাই ভোট টানতে যথেষ্ট নয়, কেননা সেটা যে আসলে ক্ষতে সাময়িক মলম লাগাবার মতোই, সে আভাস পেয়ে গেছেন পাঞ্জাবের সংগঠিত কৃষকমহল। তাই ভোটের মুখে একটা হাতেগরম টাটকা ইস্যু পেয়েছে বিজেপি, সেটা হল — প্রধানমন্ত্রীর প্রাণসংশয়।
ভাতিন্ডা থেকে ফিরোজপুর যাওয়ার পথে অবরোধ চলাকালীন একটি ফ্লাইওভারে ১৫-২০ মিনিট আটকে পড়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। এই ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর ‘মানহানি’ বললে মানা যায়, তবে তা কোন জাদুমন্ত্রের বলে ‘প্রাণহানি’-র ভয়ে পরিণত হল, তা একমাত্র বিজেপি এবং তাঁদের উৎস সংগঠন আরএসএসই বলতে পারবে। তবে প্রাথমিক সূচনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই করেছিলেন, ‘প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি!’ হার্টবিট সামলে ঠিক এই কথাটিই তিনি ফিরে এসে উচ্চারণ করেছিলেন।
ব্যস! দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সহ খাস কলকাতার বুকে মন্দিরে মন্দিরে ঘন্টাধ্বনি শুরু হয়ে গেল, হোমযজ্ঞের ধোঁয়ায় ধূমায়িত হয়ে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণভোমরা সুরক্ষিত করার প্রয়াস দেখতে মনোরঞ্জক হলেও, রীতিমতো অবাক হয়েছেন কেউ কেউ। যদিও সেদিকে দৃষ্টিপাত না করেই, বিজেপি অভিযোগ শানিয়ে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা বিবেক ঠাকুর সরাসরি পাঞ্জাব সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, “খলিস্তানিদের মতাদর্শ অনুযায়ী পাঞ্জাব সরকার চলছে। জাতীয় নিরাপত্তা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তারা ভোটে জেতার জন্যেই মরিয়া।”
অপর এক বিজেপি নেতা রাকেশ ত্রিপাঠী বলেন, “মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করায়। মানুষই এর জবাব দেবেন।”
এখন প্রশ্ন হল উল্লিখিত এই ‘মানুষ’ কারা? যাদের কথা রাকেশ ত্রিপাঠী বলেছেন! এই প্রতিক্রিয়া তাঁরা জানতে পারলেন কোন মন্ত্রবলে? এর কোনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যাবেনা। কারণ, রাজনৈতিক নেতাদের চোখে ‘মানুষ’ মানেই ‘ভোটার’। একথা প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রায় সবারই জানা আছে।
সেই সূত্র ধরেই পাল্টা অভিযোগ তুলেছে পাঞ্জাবের কংগ্রেস সরকার। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, “অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী হলে প্যাংগং হ্রদ ও অরুণাচল প্রদেশে সীমান্তে জাতীয় নিরাপত্তায় খামতির দিকে নজর দিতেন। কিন্তু গত ৭০ বছরে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজের নিরাপত্তার বিপদ নিয়ে বেশি চিন্তিত।”
বাস্তব ছবিও অনেকটা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে, যখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে থাকার প্রতিবাদে একদঙ্গল বিজেপি কর্মী সমর্থক রাস্তা আটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
প্রশ্ন রেখেছেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, “বিজেপি বলছে মোদীর নাকি প্রাণসংশয় হয়েছিল! কিসের প্রাণ সংশয়? কাকে ভয় পাচ্ছেন তিনি? মোদী কি দেশের কৃষকদের ভয় পাচ্ছেন? এর থেকে বড় অপমান আর কী হতে পারে?”
প্রশ্নটার দিকে আলোকপাত করলে সেই জিজ্ঞাসা চিহ্নটাই আরো বড় হয়ে দেখা দেয়, প্রধানমন্ত্রী কি নিজের মনের অবচেতনেই ভারতীয় কৃষকদের দ্বারা প্রাণসংশয়ের আতঙ্কে ভুগছেন? লুকোনো কোনো অপরাধবোধ? রাজনৈতিক মহলের একাংশ তাই মনে করছেন।