কথা নেই বার্তা নেই যখনই ইচ্ছে হল ট্যুইটারটা ওপেন করে টুকুর টুকুর করে আগুন জ্বালানো মন্তব্য করে বসলেন! শিক্ষিত, প্রবীণ ব্যক্তি হওয়ার সুবাদে ভাবলেন, যা আপনি বকে চলবেন সেটাই গ্রহণীয়? কার্যত এভাবেই বিজেপি নেতাকে প্রত্যুত্তর দিয়ে নেটিজেনরা বোঝালেন বাংলার বাস্তব চিত্র মোটেই তা নয়।
‘ট্যুইটতাত্ত্বিক’ হিসেবে এমনিতেই বেশ পরিচিত বিজেপি নেতা তথাগত রায়। দল তাঁকে ‘পাত্তা’ দিক বা না দিক, যতক্ষণ তিনি একটি ভারতীয় রাজনৈতিক দলের ‘সদস্য’ পদে রয়েছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনীতি কেন্দ্রিক তাঁর সব বক্তব্যই দলের বক্তব্য হিসেবেই ধরা হবে। যেটা তিনি নিজেও উল্লেখ করে থাকেন, এবং বিজেপি দল প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, দলের বৃহৎ অংশ তলে তলে বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্যকে সমর্থন করে বলেই অনেকে মনে করেন।
সেই সুযোগকে সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়ে ৭ জানুয়ারি ট্যুইটে দেশভাগের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে চটুল রসিকতা করে তথাগত রায় লেখেন, “ক্লাসে মাস্টারমশাই ছেলেদের বললেন, ‘শহীদ’ কথাটার বিপরীতার্থক শব্দ বল তো ! লাস্ট বেঞ্চি থেকে একটি ছেলে বলল, স্যার, ‘বাঙাল’।মাস্টার বললেন, বুঝিয়ে বল। ছাত্র বলল, স্যার, শহীদ হচ্ছে সেই যে দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করেছে। আর বাঙাল হচ্ছে যে প্রাণের জন্য দেশত্যাগ করেছে।”
তথাগত রায়ের এই চটুল ব্যঙ্গাত্মক রসিকতায় ফেটে পড়েছেন হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
প্রত্যুত্তরে একজন লিখেছেন, “উপমহাদেশের সবাই মূলতঃ হিন্দু।ধর্ম আছে অনেক গুলো। সুশিক্ষিতরা সবাই এটা মানে, আমি নিজেও জানি আমি আরব না। কিন্তু আবার এটাও জানি সব হিন্দু বাঙ্গালি না,আমি বাঙ্গালি।একজন প্রবীণ ও বিশিষ্ট জ্ঞানী জন হয়ে আর কতো বিভাজনের জন্য ঘৃণা ছড়াবেন? আপনি যেটা করছেন সেটা হলো উগ্রবাদ ও ঘৃণা ছড়ানো!”
বিজেপি নেতার ট্যুইট মেনশন করে জনৈক নেটিজেন ট্যুইট করে বলেন, “এরা নাকি শিক্ষিত মানুষ! যতো দেখছি ততই অবাক হচ্ছি কি করে এই সব social criminal খোলা ঘুরছে সমাজে।”
প্রাজ্ঞ বিজেপি পতাকাধারী তথাগত রায়কে ‘সোশ্যাল ক্রিমিনাল’ বলায় সম্ভবত বেশ ভালোরকমই ছ্যাঁকা লেগেছে! আবারো ট্যুইট করে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি মন্তব্যকারীদের পদবির দিকে ঘৃণাসূচক ইঙ্গিত করে বলতে চেয়েছেন, ‘হিন্দু বিতাড়ন’ নিয়ে অপ্রিয় সত্যি কথা বলেছেন বলেই ‘মুসলিম’-দের গায়ে লেগেছে তাই এত রাগে ফেটে পড়েছেন! যদিও তথাগত রায়ের ‘অপ্রিয় সত্যি’ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ নলেজব্যাঙ্ক বাড়িয়ে উপকার করেছেন জনৈক হিন্দু পদবিধারী ব্যক্তিই।
তিনি লিখেছেন, “ওপার থেকে এপারে আগত সকলেই কিন্তু প্রাণভয়ে একবস্ত্রে রাতারাতি এখানে পালিয়ে চলে আসেন নি। যেমন, আমার বাবা দেশভাগের বহু আগে থেকেই Royal AirForce এ চাকুরী করতেন। পার্টিশনের সময় দিল্লীতে পোস্টেড ছিলেন। কিন্তু যেহেতু মিলিটারিম্যান, তাই দেশবাড়িতে আর যেতে পারেননি। সকলের case এক হয় না।”
এরপরেও কি বিজেপি নেতা আবোলতাবোল বকবক করে বাংলায় বিজেপি দলের ‘সাম্প্রদায়িক’ ইমেজ বর্ধিত করে চলবেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন এটাই।