Coincidence অর্থাৎ কাকতালীয় শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। সাধারণত, নির্ধারিত থাকেনা এমন দুটি ঘটনা যদি পরস্পরের মধ্যে যোগসূত্র ঘটিয়ে ফেলে, তখনই তাকে কাকতালীয় বলা হয়ে থাকে। যেমন ধরুন, আপনি প্রতিদিন সকাল ১০:১০এর ট্রেনেই ওঠেন, একদিন আপনার প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে ১০: ১৫ বেজে গেল, ঘটনাচক্রে সেইদিনই ট্রেন লেট করেছে। তাই পাওয়ার কথা না থাকলেও ট্রেনটি আপনি পেয়ে গেলেন। এইরকম অজস্র ঘটনা দৈনন্দিন জীবনে প্রায়শই ঘটে থাকে। তবে এতাবৎ সমস্ত কাকতালীয় ঘটনাকে হার মানাবে হেনরি জিগল্যান্ডের গল্প।
আজ প্রায় ১৪০ বছর আগে পাশ্চাত্যের একটি অঞ্চলে এমনই এক আশ্চর্য হত্যার ঘটনা ঘটেছিল, যাতে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যেতে হয়। একটা লক্ষ্যভ্রষ্ট বুলেট যে বহুবছর পরে আচমকা নিজেই সক্রিয় হয়ে একজনের মৃত্যু ঘটাতে পারে, এই ঘটনা না ঘটলে বিশ্বাস করাই মুশ্কিল। তবে বহুল প্রচারিত এই কিংবদন্তি কাহিনীটি বিশ্বের কাকতালীয় ঘটনার শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
১৮৮৩ সাল। হেনরি জিগল্যান্ড দীর্ঘদিনের সম্পর্কে অবশেষে কোনও কারণে তুষ্ট হতে না পেরে প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদ ঘটান। কিন্তু প্রেমিকার পক্ষে এই বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া ছিল কঠিন। চরম অবসাদগ্রস্ত হয়ে প্রেমিকা আত্মহত্যা করেন। জিগল্যান্ডের প্রেমিকার এক ভাই ছিল। যে এই ঘটনার বদলা নিতে বোনের বিশ্বাসঘাতক প্রেমিককে হত্যার সিদ্ধান্ত নয়। একদিন বাগানে ঘুরছেন হেনরি জিগল্যান্ড। আড়াল থেকে প্রেমিকার সেই ভাই তাকে লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি ছুঁড়েই সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যান। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হেনরি। মাত্র ইঞ্চিদুয়েক দুরত্বে বন্দুক থেকে ছোঁড়া বুলেটটি তার গায়ে না লেগে পাশের একটি গাছে গিয়ে বিঁধে যায়। ঈশ্বরকে তিনি মনে মনে ধন্যবাদ জানান। কিন্তু এরপর যা ঘটে তা অকল্পনীয় ব্যাপার।
প্রেমিকার ভাই জানতনা হেনরির গায়ে গুলি লাগেনি। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল অভ্রান্ত নিশানায় ছোঁড়া গুলিতে হেনরির মৃত্যু হয়েছে। মনের মধ্যে বাসা বাঁধে অনুতাপ। নিজেকে খুনী ভাবার যন্ত্রণায় তীব্র আত্মদংশন শুরু হয়। অসহনীয় বিষাদে সেও নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করে ফেলে। এরপর ২০ বছর কেটে যায়। হেনরির স্মৃতিতেও সব ঘটনা তখন ঝাপসা অতীত।
একসময় হেনরি জিগল্যান্ড কোনও এক কারণে বাগানের সব গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন। কাজটি সহজে এবং তাড়াতাড়ি করার জন্য ডিনামাইট দিয়ে গাছগুলি উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর এখানেই প্রমাদ ঘটে যায়।
ডিনামাইটে উড়ে যাওয়া গাছের মধ্যে ওই বিশেষ গাছটি থেকে বিঁধে থাকা সেই বুলেটটি অতর্কিতে ছিটকে এসে হেনরির কপাল ফাটিয়ে বেরিয়ে যায়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রক্তাক্ত হেনরি জিগল্যান্ড।
এই ঘটনাকে কাকতালীয় ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি? রহস্যময় এই বুলেটটি আজও সেই জিজ্ঞাসা চিহ্ন বহন করে চলেছে।