আচমকাই আলো দেখা যায়। গোলাকৃতি এক রশ্মিচ্ছটা, হলুদ, সবুজ ক্রমশ নানারঙে রূপান্তরিত হয়ে চলেছে! কিন্তু কোথা থেকে কীভাবে এই আলোর আবির্ভাব, তা কেউই সঠিক ধরতে পারছিলেননা। বাস্তবিকই এমন কান্ড ঘটল হুগলি জেলার রিষড়ায়।
প্রথম নজরে অলৌকিক আলো নিরীক্ষণ করে অনেকটা চাপা আতঙ্কই তৈরি হয়েছিল এলাকাবাসীদের মনে। এরপর আলো দেখতে একজন দুজন করে ভিড় বাড়তেই হইহই পড়ে যায়।
সোমবার রাতের ঘটনা। রিষড়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তভুর্ক্ত ‘পদ্মপুকুরে’ হঠাৎই এক গোলাকৃতি আলোকরশ্মি লক্ষ্য করে ঘাবড়ে যান বেশকিছু মানুষ। এরপর লোকমুখে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভিড় ক্রমশ বাড়তেই বেড়ে ওঠে কৌতূহল! ওটা কিসের আলো? হইচইয়ের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় স্থানীয় পুলিশ। সূত্র বলছে ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায় পুলিশও!
অনেকে এই রহস্যময় আলোকে দৈবী মহিমা ভেবে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হতে বলেন। কেউ কারুর সরাসরি দাবি, ‘ছোট থেকে আমরা এই পুকুর দেখে আসছি। এই পুকুরে নানা সময়ে বহু দেব-দেবীর বিসর্জন হয়েছে। সেই সব দেবদেবীর কৃপাদৃষ্টির ফলেই পুকুরে ফুটে উঠেছে এই আলো, এটা দিব্যজ্যোতি।’ তবে বিজ্ঞান বলছে এই ধারণা সঠিক নয়।
ইতিমধ্যেই নানা মহলে এই আলোর কথা ছড়িয়েছে। এই নিয়ে মতামতও প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিশিষ্টজন। রিষড়া ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞান মঞ্চের সাথে যুক্ত রথীন শীল বলেছেন, “এই আলোর সাথে কোনও অলৌকিক বিষয় জড়িত নয়। পুকুরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার জেরে এই গোলাকার হলুদ আলো দেখা গিয়েছে। গ্রামবাংলায় এই ধরনের আলো মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। চলতি প্রবাদে একে আলেয়া বলে। পুকুরের মধ্যে দীর্ঘদিনের জমে থাকা পাঁক আর পচে যাওয়া গাছের পাতা থেকে নির্গত গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে এলে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।”
‘আলেয়া’ পরিচিত শব্দ। ‘আলোইয়া ভূত’ যেখান থেকে উৎপত্তি। এই বিষয়টি বহু রোমহর্ষক কাহিনীতেই বারেবারে ঘুরেফিরে এসেছে। সেই আলেয়ারই বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করেছেন রথীন শীল মহাশয়। তাঁর মতে, এবং বহু বিশিষ্টজনের মতে সোমবার রাতে সেই ঘটনাই ঘটেছিল রিষড়ায়।